বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে তালের চাষ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি হচ্ছে।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে সারি সারি তালগাছগুলোতে কচি তালে শাঁসে ভরে গেছে। গ্রামগঞ্জ হয়ে তাল এখন পৌরশহরের অলিগলিতে বিক্রি হচ্ছে তালে শাঁস।
এ উপজেলায় বজ্রপাত প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন সংগঠন এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বীরগঞ্জ এপির যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় তাল চারা রোপণ করছেন। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে তাল চাষাবাদ হচ্ছে। চাষ লাভজনক হওয়ায় এদিকে ঝুঁকছেন এই এলাকার চাষিরা। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এখন রাজধানীসহ সারা দেশেও যাচ্ছে ফরমালিনমুক্ত তালের শাঁস। চলছে মধুমাস। এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে,আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাঁস। তাল ফলের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি “তালকুর” নামে বেশি পরিচিত। প্রচন্ড গরমে তালের এই শাঁসটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়।
বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রির বেড়ে গেছে। অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তাল গাছ থেকে অপরিপক্ক তাল ফল পাইকারী কিনে এনে কেটে কেটে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে। তবে নরম অবস্থায় তাল শাঁসের দাম অনেক বেশি। কিন্তু,দিন যতই যেতে থাকে এই তাল শাঁস ততই শক্ত হতে থাকে। তখন শাঁসের দাম কমতে থাকে এবং এক সময় তাল পরিপক্ক হয়ে গেলে তখন আর এই শাঁস খাওয়া সম্ভব হয় না।খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কালের বিবর্তনে বীরগঞ্জ উপজেলা পল্লী থেকে অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল তাল গাছ। বজ্রপাত প্রতিরোধকেরও কাজ করছে এই তালগাছ এখন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোপণ করা হচ্ছে । একই সঙ্গে জেলার হাট-বাজারে তালের শাঁসের বেশ কদর বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ফলে মৌসুমি ফল হিসেবে তালের শাঁস গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। চলছে জৈষ্ঠ্য মাস। এরই মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌর শহরের আম, লিচু কাঁঠাল, জাম, লটকন, ড্রাগন, আনারস সহ হরেক রকমের ফল দেখা মিলছে। সেই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে সুস্বাদু তালের শাঁসও। প্রচণ্ড তাপদাহে বাড়ছে এই ফলটির কদর। বীরগঞ্জ পৌর শহরের তাজমহল, সেন্টারপাড়া, খানসামা মোড়, দৈনিক বাজার, বলাকা সহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভ্যান করে ভ্রমমাণভাবে এখন বিক্রি হচ্ছে তালের শাঁস। ছোট বড় প্রকার ভেদে প্রতিটির দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তাদের দাবি, আম ও লিচু আনারস সহ মৌসুমী অন্য ফলের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহারের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু তালের শাঁসে এসবের প্রয়োজন হয় না। ফলে ভেজালমুক্ত তাল শাঁসের কদর বেশি। পৌর শহরের তালের শাঁস ব্যবসায়ী উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের চকবানারশী গ্রামের সোলেমান ও গন্ডারঝার গ্রামের নুরুজ্জামান বলেন, কাহারোল, সুজালপুর ইউনিয়নের বর্ষা মাদুরীয়া, কল্যাণী, খানসামাসহ বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে শাঁস সংগ্রহ করে শহরে এনে বিক্রি করি।
আরও জানান, প্রতিবছরই এ সময়ে আমরা তালের শাঁস বিক্রি করে থাকি। গরমের এ দিনে তালের শাঁস বিক্রিও হয় ভালো। বেশ চাহিদাও রয়েছে। পাশাপাশি দামও ভালো রয়েছে। সারাদিনে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি করে আমাদের ৮শত থেকে ১ হাজার টাকা মুনাফা হয়। সেন্টার মোড়ে তালের শাঁস কিনতে আসা সম্রাট আকবর বলেন, এটি সুস্বাদু ফল। প্রচণ্ড গরমে তালের শাঁস খেতে ভালোই লাগে। তাইতো তালের শাঁস কিনতে এলাম। তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। উল্লেখ্য যে তালের শাঁসে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ বি,সি সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং কঁচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।