দিনাজপুরে পানির দামে গরুর চামড়া বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া কেউ কিনছে না। ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়া, শ্রমিক ও লবনের মুল্য দ্বিগুণ এবং চামড়া বিক্রি নিয়ে দিনাজপুরে চামড়া ব্যবসায়ে ব্যাপক দরপতন ও ধ্বস। ছাগলের চামড়া কেউ কিনছে না। কারণ পরিবহনসহ লবণজাত করতে যে খরচ, বিক্রি করে তা উঠবে না।
এদিকে, উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম রামনগর চামড়া বাজার এলাকার রাস্তায় ফেলে যাওয়া ছাগলের চামড়া পৌরসভার ময়লা পরিবহন ট্রাকে করে ফেলে দেওয়া হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। আর ঈদের দিন থেকে শুক্রবার দুপুর এবং শনিবার রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার বিকালেও দিনাজপুর পৌরসভার ময়লা পরিবহন ট্রাকে করে মাতাসাগর ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিতে দেখা গেছে। রামনগর চামড়া মার্কেটে ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই ওই বাজারের রাস্তায় ফেলে দিয়েছে চামড়া। তাই বাজার এলাকার রাস্তার চারপাশে ছাগলের চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
কোরবানি দেওয়ার পর আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কেনার প্রতিযোগিতা থাকতো মৌসুমী ব্যবসায়ীদের,যা এখন আর নেই।গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০০টাকা থেকে ৪০০টাকা। দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অথচ এই বাজারে ঈদের দিন থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত গরুর চামড়া প্রতিটি ২০০ থেকে ৪০০টাকায় বিক্রি হয়। ছাগলের চামড়া প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫টাকায়। কিন্তু ঈদের পরদিন ছাগলের চামড়া ৫টাকায়ও কেউ কিনছে না।এতে ছাগল এবং ছোট ছোট গরুর অনেক চামড়াই ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে বৃষ্টিতে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চামড়া লবণ লাগানো নিয়ে বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
রামনগরে ছাগলের চামড়া নিয়ে আসা রাকিব হোসেন, ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন বলেন. ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছেন। কিন্তু কেউ এক পয়সাও দাম বলছে না। তাই তারা চামড়া ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
দিনাজপুর পৌরসভার ময়লা পরিবহন ট্রাকের গাড়িচালক আমানুল্লাহ হাসান নয়ন জানান, রামনগর মোড় এলাকার রাস্তায় ফেলে দেয়া ছাগলের চামড়া ট্রাকে তুলে নিয়ে মাতাসাগর ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়। তিনি ঈদের দিন থেকে শুক্রবারও ছাগলের চামড়া ভাগাড়ে ফেলেছেন।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রæপের সভাপতি জুলফিকার আলী স্বপন বলেন, চামড়ার ব্যবসা এমনিতেই খারাপ। চামড়া নিয়ে এমনিতেই বিপদে আছি, আবার বৃষ্টি। শ্রমিকরা কাজ করছে না, মানবিক কারণে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতেও বলা যাচ্ছে না। বৈরী আবহাওয়ায় চামড়াগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করতে পারবো কি না।
তিনি জানান, ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারী মালিকদের কাছে বকেয়া রেখেই কিছু ব্যবসায়ী ব্যবসা ধরে রাখতে চামড়া কেনা বেচায় রয়েছেন। ঈদের দিন কোয়ালিটি অনুযায়ী সর্বোচ্চ গরুর চামড়া দাম ছিল ৯০০টাকা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আশে-পাশের জেলার চামড়া এই মার্কেটে এখনও আসেনি। আবার অনেকে নিজেরাই প্রক্রিয়াজাত করে পরে বিক্রি করেন।
উল্লেখ্য,ঢাকায় চামড়া পাঠানোর জন্য রয়েছেন প্রায় ৩০-৪০জন ব্যবসায়ী। আর কাঁচা চামড়া লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক।