যেই গাছের দিকে তাকানো যায় সেদিকে বিভিন্ন পাখি উড়ছে, কোনটি ডাকছে। এলাকার বিভিন্ন গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে কিংবা মগডালে দিনে-রাতে সব সময়ই পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে জানান দেয় তাদের উপস্থিতি। কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত এলাকা। এলাকায় পরিবেশবান্ধব পাখিদের কলকাকলিতে প্রকৃতি যেন ভিন্ন রূপ পেয়েছে। কয়েক যুগ ধরে সাদা বক, পানকৌড়ি, ঘুঘু, সারস, ডাহুক আর রাতচোরা পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল কুমুরিয়া গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়িসহ কয়েক পাড়া।
এ ছাড়াও ওই এলাকায় বাটবিড়াল, বেজি, বিভিন্ন জাতের গুইসাপ রয়েছে। কাঁঠাল, আম, জাম, নিম, ফলদ গাছ, বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন গাছের ডালে বাসা বেঁধেছে শত শত রাতচোরা, সাদা বক, পানকৌড়িরা। চেয়ারম্যানবাড়িসহ ওই এলাকার চারপাশে গাছ ও আশপাশের বাঁশঝাড়ে গড়ে উঠেছে পাখিদের অভয়ারণ্য। বছরে পাঁচ মাস এদের বেশী দেখা যায়। শত বছর ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।নিরিবিলিতে বসবাস পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউপির কুমুরিয়া গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়িসহ আশেপাশের কয়েক এলাকা।
সারাদিন দেখা গেলেও সকালে আর বিকালে পাখিদের আনাগোনায় মন জুড়িয়ে যাবে পাখি প্রেমিদের। সকাল হলেই মা পাখিরা খাবারের সন্ধানে উড়ে যায় আবার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে ফিরে আসে নীড়ে। সন্ধ্যার দিকে গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে শাখা-প্রশাখা জুড়ে সাদা-কালো ফুল। ওদের নড়াচড়া আর ডাকাডাকিতে বোঝা যায়- ফুল নয়, সাদা-কালো বক আর পানকৌড়ি নইলে রাতচোরা। কেউ বিরক্ত করে না এমন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে বাসা বেঁধে ডিম দেয় এবং তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় তারা। মা পাখিরা খাবার সংগ্রহ করে এনে মুখে তুলে দেয় বাচ্চা পাখির। এলাকার পুকুরগুলোতে দেখা যায় কোনো পাখি মাছ শিকারে ব্যস্ত। পাখির ওড়াউড়ি, মা পাখির বাচ্চাকে খাওয়ানো আর বাবা পাখির পাহারা দেওয়ার দৃশ্য প্রতিদিন সবাইকে মুগ্ধ করে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে যে কারও মনে হতে পারে এটি পাখিদের রাজ্য। আছে বন্যপ্রাণীও। ওই এলাকায় বাইরে থেকে কোনো অতিথি এলে তারাও প্রকৃতির মাঝে মুগ্ধ হয়ে যায়।
সন্ধ্যা আর সকালে যে কেউ গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে গেলেই বুঝতে পারবে পাখিদের নিরাপদ আবাসের কথা। পাখির কিচিরমিচির কোলাহলে অনেকের সকালে ঘুম ভাঙে। তবে এক দিনে এ এলাকায় পাখিরা নিরাপদ আবাস গড়েনি।
পাখিপ্রেমী মরহুম সফি উদ্দিন মন্ডল ও হযরত আলী এবং ভাবকী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নজরুল ইসলাম শাহ যুগ যুগ ধরে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলেন। তাই শত বছর ধরে এখানে পাখিরা আসছে বলে জানান তাদের উত্তরসূরিরা। অর্ধশত বিঘা জমির ওপর সবুজ ছায়া ঘেরা শত শত গাছ ও বাঁশঝাড় যুগ যুগ ধরে পাখিরা অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে।
তাদের উত্তরসুরী বর্তমান টানা তিনবারের খানসামা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম সুজাউদ্দিন শাহ (লুহিন শাহ) জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষের আমল থেকে এই এলাকা পাখিদের অভায়রন্যে পরিনত হয়েছে। তাই বছরের সব সময় কমবেশী এখানে পাখিসহ বন্য প্রানী দেখা যায়। কেউ বিরক্ত করে না। মারে না। তাই তারা নিরাপদ মনে করে। তাদের থাকার সুবিধার্থে বাশঁঝাড়ের বাশঁগুলোকে ভালভাবে গুছিয়ে রাখা হয়। বাশঁঝাড়সহ কোন গাছও কাটা হয়না যাতে তাদের বাচ্চা পালনে সুবিধা হয়। বাচ্চা বড় হলেও চলে যায় এবং আবার তারা ফিরে আসে বৈশাখে।