বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: অনেক মানুষ আছে যারা চব্বিশ ঘণ্টা খেটে বা ব্যবসা করে সংসার চালাতে হিমসিম খায়, সেখানে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পল্লীগ্রামের সাজ্জাদ হোসেন নামে এক বাক্য প্রতিবন্ধী হয়েও ব্যবসা করে দিব্যি সংসার চালাচ্ছে। ঘটনাটি অনেকের বিশ্বাস হতে না চাইলেও আসলে বাস্তব এ ঘটনাটি উপজেলা সাতোর ও ভোগনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার ধূলাউড়ি তিন রাস্তার মোড়ে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, এ বাজারের পাশের গ্রাম সাতোর ইউপির গড়পাড়াপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে বাক্য প্রতিবন্ধী মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রায় ২০ বছর যাবত চা-ছোলা-বুট, পাপড় ও খেশারি ডালের পেঁয়াজু তৈরি করে ব্যবসা করে আসছেন।
তিনি সারাদিন পেরিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যবসা করেন তিনি। সে তার সকল ছোলা-বুট ও পেঁয়াজু শেষ হয়ে যায়। সকাল থেকে প্রতিদিন রাত পর্যন্ত থেকে ৫ কেজি ডাল, ২ কেজি পাপড়,পাঁচ কেটলি চান ও ৫ কেজি ছোলা-বুট তৈরি করে তিনি। তার রান্না করা ছোলা-বুট আর গরম গরম পেঁয়াজু তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের লোকজন এসে লাইনে দাঁড়িয়ে কিনে নিয়ে যায়। আর এ পেঁয়াজু ও ছোলা-বুট রাতেই শেষ হয়ে যায়। অনেক সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিদিন ভিড় করে ওই দোকানে।
ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছেন বাক্য প্রতিবন্ধী সাজ্জাদ হোসেন,
প্রথমবারের মতো ধূলাউড়ি বাজারে চপ, তৈরি ছোলা-বুট ও পেঁয়াজু খুবই সুস্বাদু হওয়ায় উপজেলার সর্বত্র এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। ভাড়া নিয়ে ছোট্ট একটি টিনের দোকানে ১৫থেকে ১৭ জনের বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা না থাকলেও অনেকেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করেন ওই বুট-পেঁয়াজু খেতে দেখা যায়। অনেকের বাকী হিসাবগুলো তিনি দোকানে ওয়ালে চক মাটির সহয্যে লেখে রাখানেন তিনি। দোকানে বৃদ্ধ পিতা ইউসুফ আলী সহযোগিতা করে থাকেন।
ফলে ওই দিন বুট-পেঁয়াজু প্রায় ডবল তৈনি করে থাকেন। শহরে যে পেঁয়াজু ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয় সেই পেঁয়াজু এখানে মাত্র দুই টাকায় পাওয়া যায়। ফলে ধনি-গরিব সবাই একবার হলেও এ পেঁয়াজু খেতে আসে।
এ বিষয়ে অত্র ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আজিজ জানান,মানুষের ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল থাকলে সবাই সম্ভব। আগে অনেকে কষ্টে চলাতে হতো বাক্য প্রতিবন্ধী সাজ্জাদ হোসেনের সংসার। তার কষ্ট নিবারণে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সমাজ এরকম সাজ্জাদ এর মতো অনেককে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতে দেখা যায়। কিন্তু সাজ্জাদ হোসেন ভিক্ষাবৃত্তি না করেও তার সন্তানের লেখাপড়ার পাশাপাশি স্ত্রী পরিবারের সদস্যদের ছোট্ট একটি দোকানে ব্যবসা করে সুন্দরভাবে চলাচ্ছে।
ভোগনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজু ইসলাম ও স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন ভালো ও মানসম্পন্ন খাবারের দোকান দিলে সারা দিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বেঁচা-বিক্রির প্রয়োজন নেই। গুণগত মানেই যে কেউ প্রতিষ্ঠা পেতে পারে, যা সাজ্জাদ হোসেন তার দৃষ্টান্ত।