দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলা মুক্ত দিবস আজ ৬ ডিসেম্বর । মুক্ত করতে অনেক মানুষ শহীদ হয়। দিবসটি পালনে র্যালী ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসুচী নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
বোচাগঞ্জ
বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি \ আজ ৬ ডিসেম্বর বুধবার দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বোচাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে শত্রæমুক্ত করেছিল বোচাগঞ্জের মাটি।
দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করেন বোচাগঞ্জের কৃতিসন্তান সাবেক প্রতিমন্ত্রী তৎকালীন তাজউদ্দীন সরকারের বিশেষ দূত, আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আব্দুর রৌফ চৌধুরী ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা হামিদ খান ভাষানির ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম আনোয়ারুল হক চৌধুরী নবাব। এছাড়া বোচাগঞ্জের ১১৫ জন দামাল ছেলে, আনসার থেকে আগত একজন সহ মোট ১১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণপন লড়াই চালিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে বোচাগঞ্জকে হানাদার মুক্ত করেন।
এতে ধনতলা গ্রামের আব্দুর বারেক ও এনামুল হক, কাকদুয়ার গ্রামের চিনিরাম দেবশর্মা, বিহাগাঁও গ্রামের কাশেম আলী, রনগাঁও ইউনিয়নের ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গুলিয়া বাংরু, বনকোট চুনিয়াপাড়া গ্রামের বের্যমোহন রায় সহ সর্বমোট ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ততকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় প্রথমবারের মত বোচাগঞ্জের কেন্দ্রীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
বোচাগঞ্জ মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে এবারও বোচাগঞ্জ উপজেলা মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সকাল ৭টায় উপজেলার সকল সরকারী ও বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় স্মৃতি সৌধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন, সকাল ১০টায় মুক্তিযোদ্ধা জনতার বর্নাঢ্য র্যালী, বিকাল ৪ টায় রবীন্দ্র নজরুল মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার সমাবেশ ও সন্ধ্যা ৭ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বোচাগঞ্জ মুক্ত দিবসের সকল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জাফরুল্লাহ সকলকে প্রতিটি কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বোচাগঞ্জ মুক্ত দিবসের কর্মসূচীকে সফল করার আহবান জানান।
বীরগঞ্জ
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বীরগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস। এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বীরগঞ্জ এলাকাকে শত্রæ মুক্ত করে মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর যোদ্ধারা। পাশ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় ৩ ডিসেম্বর মুক্ত হওয়ায় সৈয়দপুর (পাক বিহার) অভিমুখে পালিয়ে যাওয়ার সময় বীরগঞ্জে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। দিনাজপুর ৭নং সেক্টরে লেঃ কঃ কাজী নুরুজ্জামানের নেতৃতাধীন সেনাবাহিনীর হাবিলদার মোস্তাফিজুর রহমান বীরগঞ্জ ও খানাসামার যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে ভাতগাঁও ব্রিজের একাংশ ভেঙ্গে পাক হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর পালিয়ে যায়। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান বীরগঞ্জ ব্রাঞ্চের গার্ড ল²ীপুর জেলার ল²ীপুর উপজেলার দীঘলি গ্রামের মৃতঃ সিকান্দার আলীর পুত্র মোঃ মহসিন আলীসহ অজ্ঞাতনামা দুইজন মদনপুর সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। বিভিন্ন স্থানে বীরগঞ্জের ৩ বীর সন্তান বুধারু বর্মন, রমেন সেন ও মতিলাল শহীদ হন। ৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে মুক্ত হয় বীরগঞ্জ।
বিরামপুর
আজ ৬ ডিসেম্বর বিরামপুর শত্রæ মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭নং সেক্টরের তরঙ্গপুর কালিয়াগঞ্জ রণাঙ্গনে ২৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহন করে। এই সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযোদ্ধা উন্নতম বীর সেনানী যথাক্রমে মেজর নজমুল হুদা ও মেজর নুরুজ্জামান। তৎকালীন বিরামপুরে দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে আব্দুল করিম, আনোয়ারুল হক, আজিজার রহমান, মজিবর রহমান ও বিরামপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লুৎফর রহমান শাহ্ নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযোদ্ধারা বিরামপুরকে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ঘোড়াঘাট রেলগুমটি, কেটরা শাল বাগান, ভেলারপাড় ব্রিজ, ডাক বাংলা, পূর্বজগন্নাথপুর মামুনাবাদ বাঙ্কার বসিয়ে সর্তকত অবস্থায় থাকতেন। পাকসেনারা ৪ ডিসেম্বর পাইলট স্কুলের সন্মুখে ও ঘাটপাড় ব্রিজে প্রচন্ড শেলিং করে ভাইগড় গ্রাম দিয়ে তীরমনিতে ৪টি শেল নিক্ষেপ করে। লোম হর্ষক ও সন্মুখ যুদ্ধে কেটরা হাটে ১৬ মুক্তিযোদ্ধাসহ ৭ পাক হানাদার বাহিনী নিহত ও শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করে। এতে উপজেলার ২০ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, পঙ্গু হন ২জন, মারাত্মক ভাবে আহত হন ১৩ জন।