রবিবার , ১৭ মার্চ ২০২৪ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয় আছে নেই রাস্তা, দূর্ভোগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
মার্চ ১৭, ২০২৪ ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার এক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও খেলার মাঠ সবই আছে। কিন্তু সেই বিদ্যালয়ে যাওয়ার নেই কোনো রাস্তা। এই বিদ্যালয়ের নাম ৬৪ নং ফরিদাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি ১নং আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ফরিদাবাদ গ্রামে অবস্থিত। এই বিদ্যালয়ের চারপাশে জমির ক্ষেত। জমির আইল ও মানুষের বাড়ির উঠান দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এই ভোগান্তি আরো চরম পর্যায়ে উঠে যায়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারীকরণ হয় ২০১৩ সালে। এখানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৯৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক রয়েছেন ছয় জন।
এই বিদ্যালয়ের রাস্তার জন্য ঐ এলাকার হরিপদ অধিকারী, সোলেমান আলী ও রবি সেনের দেওয়া জমি দিয়ে ১৯৯০ সালের দিকে চলাচলের রাস্তা তৈরী হয়।
জানা যায়, ২০১৭ সালের দিকে ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হরিপদ অধিকারী দীর্ঘ ১৫ বছর পর সভাপতি হিসেবে বাদ যাওয়ার পর এবং জমির সীমানা জটিলতার জেরে স্কুল যাওয়ার জন্য নির্ধারিত রাস্তা কেটে আবাদী জমিতে রুপান্তর করেন। ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আইল দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু এসব বিষয় অস্বীকার করে হরিপদ অধিকারী মুঠোফোনে বলেন, এটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি তাই আমি ছেড়ে দিব না।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মূল সড়ক থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বের আকাঁবাকাঁ পথ আর জমির ক্ষেতের পরে ৬৪ নং ফরিদাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারদিকেই আবাদি জমি। সেখানে ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের মূল ভবনে যেতে পার হতে হবে বাড়ির উঠান ও জমির আইল। স্কুলে ভ্যান ও মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য তাই হাঁটাপথে সংশ্লিষ্টদের স্কুলে যেতে হয়।
এদিন দুপুর ১২টার সময় বিদ্যালয়ে দেখা গেল, শিক্ষার্থীরা ভুট্টা ক্ষেতের আইল ও বাঁশ ঝাড়ের ভিতর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে।
এ সময় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোখলেছুর রহমান বলেন, ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে খুব অসুবিধা হয়। বর্ষাকালে আরো সমস্যা হয় তখন কাঁদা পানি পার হয়ে আসতে হয়।
একই শ্রেণির জ্যোতি সরকার বলেন, রাস্তা না থাকায় ভুট্টা ক্ষেত ও বাঁশঝাড় দিয়ে স্কুলে আসতে আমাদের ভয় লাগে। তখন শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের স্কুলে যেতে সহায়তা করে কিন্তু স্কুলের যাতায়াতের জন্য রাস্তা হলে ভালো হয়।
বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা নুর ইসলাম, শামসুল আলম ও মোহেন সেন বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে চলাচলের জন্য রাস্তা থাকলেও পরে কেন জানি সেটা কেটে ফেলা হয়েছে। এইজন্য স্কুলে যেতে বাচ্চাদের কষ্ট হয়। তাই এই স্কুলের জন্য সরকারিভাবেই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা নির্মাণের দাবি জানায় তাঁরা।
বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসায় কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক আনছার আলী বলেন, রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীসহ সবারই বিদ্যালয় আসতে খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে অভিভাবকরা স্কুলে শিক্ষার্থী পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে তবুও আমরা শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত ও শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে কাজ করছি। তবে সকলের স্বদিচ্ছায় এই রাস্তা নির্মাণ হলে শিক্ষার মান ভালো হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইতিপূর্বে একাধিকবার রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু জমি মালিকের অনিচ্ছায় সেটি সম্ভব হয়নি ফলে শিক্ষার্থীরা দূর্ভোগে চলাচল করে। এটি নিরসনে পুনরায় রাস্তা নির্মাণের জন্য ইউএনও মহোদয় ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তাজ উদ্দিন বলেন, ঐ স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দূর্ভোগের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। শিক্ষার পরিবেশ যাতে ব্যাহত না হয় ও দূর্ভোগ লাঘবে শিক্ষা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা বলে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও