প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঐতিহাসিক আশুড়ার বিল ও অপরূপ মুগ্ধকর শালবনকে একই সুতোয় গেঁেথছে আকাঁ-বাকাঁ দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু। আর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদ-উল ফিতর ও বাঙলা নববর্ষের ছুটিতে ভীড় জমিয়েছে অগনিতক দর্শনার্থীসহ পর্যটকরা। ঈদের দিন থেকে আজও উপচে পড়া ভীড় লক্ষনীয়।
এছাড়াও চিরিরবন্দরের ভূষিরবন্দরে আত্রাই নদীর ব্রিজ ও চিরিরবন্দরের কাঁকড়া নদীর ওপর জোড়া রেলব্রিজ ও নদীতে এবং খানসামার আত্রাই নদীর ব্রিজেরপাড় ও জিরোপয়েন্ট এলাকায় অগনিতক দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষনীয়।
ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলের প্রাকৃতিক শালবনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। আশুড়ার বিলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কাঠের সেতুতে দাড়িয়ে বিল আর দু’পাশের বনের দৃশ্য দেখতে কাছে টানে ভ্রমনপিপাসুদের। এই দৃশ্যে মিলিত হতে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসছে এখানে। এই বিলে সারা বছরই দর্শনার্থীদের প্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিশাল আয়তনের বিলটির সৌন্দর্য রক্ষার্থে এবং সারাবছর পানি ধারণের জন্য ক্রস ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও বর্তমানে অনেকটা শুকিয়ে যাওয়ায় ধান চাষ হয়ে সবুজের সমারোহ। দুই শালবনের মাঝ দিয়ে আশুড়ার বিল। আর দুইবনকে সংযুক্ত করতে বিলের মুনির থান ঘাট থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ভ্রমনপিপাসুদের সুবিধার্থে শাল কাঠ দিয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ ৯০০মিটার জেড আকৃতির দৃষ্টিনন্দন আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু নির্মান করা হয় এবং নামকরণ করা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু।
বিলের পানি, মুক্ত বাতাস, চারপাশে সবুজ ঘনঅরণ্য, পাখিদের কিচিরমিচির ডাকাডাকি এসব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্তরে অন্যরকম শিহরণ জাগিয়ে তুলে। রাতে আশুড়ার বিলের উপর দৃষ্টিনন্দন শেখ ফজিলাতুন্নেছা কাঠের সেতুতে আলোক বাতি ছাড়াও বনের পাশে পাশে ল্যাট্রিন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
দর্শণার্থী ইয়ামেন সরকার, সানাউল্লাহসহ কয়েকজন জানান,দুই শালবনের মাঝে এই দৃষ্টিনন্দন সেতুতে সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে অন্যরকম মনে হয়। সন্ধার পর আলোকবাতি বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সেতুর বাম দিকে পানি শুকিয়ে থাকায় ধান চাষে সবুজ সমারোহ অন্যদিকে অল্প পানি আছে। দেখতে যে কেউ মুগ্ধ হবে। তবে বিলটিতে পানি ধরে রাখতে এবং আরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিঃ মিঃ দূরে জাতীয় উদ্যানের শালবনের কোল ঘেষে এ বিলের অবস্থান। আশুড়ার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এই বনে শাল ছাড়াও সেগুন, গামার, কড়াই, বেত, বাঁশ, জামসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছগাছড়া রয়েছে। এখনও এ বিলটিতে অনেক হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির মাছ জেলেদের হাতে ধরা পড়ে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় ৫কিলোমিটার।
এদিকে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই আশুড়ার বিল নিয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অশুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের নিকট অশুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অশুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে অশুরের বা আশুড়ার বিল নামকরন করা হয়। অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশি নালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বিলের মাঝে কতিপয় স্থানের চমৎকার নাম আছে যেমন- পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল ও মুনির থান ইত্যাদি। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানী এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন এক সময় নানা কিংবদন্তীর জন্ম দেয়।