বাংলাদেশের সুখ সমৃদ্ধি ও যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব শান্তি কামনায় এবং বৈদিক সনাতনী পরষ্পরা জাগরণে ইতিহাসে প্রথমবার ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে ‘বিংশতি (২০)সহস্রাধিক কণ্ঠে পবিত্র ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেছেন, বাংলাদেশ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির ঐতিহ্যের দেশ। এই চেতনাকে ধারণ করেই জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। আমাদের সংবিধান হচ্ছে অসা¤প্রদায়িকতার ধারক।
শনিবার রংপুর বিভাগীয় পবিত্র বেদ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শিক্ষাদান সংঘ এর আয়োজনে দিনাজপুরের কাহারোলের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে বিংশতি (২০) সহস্রাধিক কণ্ঠে পবিত্র “শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এসব কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর একই ধারাবাহিকতায় সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি রক্ষার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার ২০১৩ সালেই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন প্রণয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স¤প্রতি এ সম্পর্কিত দুইটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছে। এছাড়া, দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষায় দেবোত্তর সম্পদ আইনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান।
ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র বলেন, বৈচিত্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেই দেশের ঐক্যের প্রেরণা নিশ্চিত করে। এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশের বৈচিত্রময় সৌন্দর্যকে আরও শক্তিশালী করেছে।
ভূমিমন্ত্রী অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের সনাতন স¤প্রদায়ের জন্য এই অনুষ্ঠান অপরিসীম সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরে শান্তিপূর্ণভাবে পূজনীয় গীতা পাঠ করে এত বড় সমাবেশ প্রত্যক্ষ করা ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সহনশীলতা, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
মতামত ব্যক্ত করে বক্তারা বলেন, এই পবিত্র মন্দিরে ২০ হাজার কণ্ঠে পবিত্র গ্রন্থ’ পাঠ তাদের জীবনে পাওয়া অনন্য এক অভিজ্ঞতা। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের আয়োজন সহযোগীতার জন্য এবং ধর্মীয় স¤প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
ভূমিমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রদীপ প্রজ্বলন ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্থাপন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ধ্বজা উত্তোলন ও বেদ মন্ত্রপাঠ, সূর্য্য নমস্কার ও সমবেতভাবে পবিত্র বেদমন্ত্র পাঠ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি (সমবেতভাবে) পর্বের পর সমবেত কণ্ঠে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাপাঠের মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। শেষে অতিথিববৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এর আগে মন্দির কমপ্লেক্সেএসে কান্তজিউ মন্দির ভবন পরিদর্শন করেন ভূমিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য দ্রৌপদী দেবী আগরওয়ালা, সাবেক সংসদ সদস্য ও হিন্দু কল্যান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোরঞ্জন শীল গোপাল, একুশে পদক প্রাপ্ত শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত রায়, শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ কালিপদ মজুমদার, ভারতের বিবেকানন্দ মিশনের অধ্যক্ষ ড. মানস ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূর-এ-আলম, কাহারোল উপজেলার ইউএনও মোঃ আমিনুল ইসলামসহ স্থনীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ।
গীতা পাঠ অনুষ্ঠানে উত্তরবংগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন কান্তাজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে হাজার হাজার ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।