আসন্ন ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে নানা নামে ও ওজনে কোরবানির গরু। এসবের মধ্যে কোরবানির হাট কাঁপাতে বাজারে আসছে ‘দিনাজপুরের রাজা’ ও ‘যুবরাজ’ নামের গরু দুটি। এখনই সবার দৃষ্টি কেড়েছে।
জেলার পার্বতীপুরের হামিদপুর ইউপির মধ্যদূর্গাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবারে নিজ বাড়িতে “দিনাজপুরের রাজা”সহ ১০টি গরু লালন-পালন করেছেন। কোন রাজ্যের রাজা না হলেও আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত লালন-পালন করা বিশাল সুঠাম দেহের হলেষ্টান ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়ের নাম রেখেছেন ‘দিনাজপুরের রাজা’। সাদা-কালো রঙের সুঠাম স্বাস্থ্যের ষাঁড়টির শরিরের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, উচ্চতা ৬ ফুট। ওজন ৩৫ মণ অর্থাৎ ১৪০০কেজি। দিনাজপুরের রাজাকে ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করতেন পারবেন বলে আশা করছেন আব্দুর রাজ্জাক।
অপরদিকে খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউপির নেউলা গ্রামের খালপাড়ার সৌদি আরব প্রবাসী মো. জাকারিয়া হাবিব সৌদি আরবে থাকার কারণে শখ করে গরুটির নাম দেন ‘যুবরাজ’। নিজ বাড়ির ইটের দেয়াল আর টিনের ছাউনি দেয়া ঘরে পালন করে বড় করেছে যুবরাজকে। শাহীওয়াল জাতের ১৪মণ ওজনের ষাড় গরু যুবরাজকে বিক্রির জন্য ১০লাখ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। ৫৬০কেজি ওজনের এই যুবরাজকে দেখতে আসছেন অনেকে।
এব্যাপারে ‘দিনাজপুরের রাজা’র মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, সাড়ে ৪বছর পূর্বে আমার খামারেই ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি থেকে জন্ম নেয় রাজা। হলেষ্টান ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাড়টিকে রাজার মতই লালন পালন করায় নাম দিয়েছি ‘দিনাজপুরের রাজা’। ষাঁড়টি বাড়ী থেকে বের করতে ৪-৫জন মানুষকে সামলাতে হয়, হাটে আনা নেওয়া কষ্টকর তাই বাড়ী থেকে রাজাকে বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। খাবেরের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য খড়, ঘাস, ছোলা, মুসুরের ডাল ও ভুষি, ভুট্টার আটা, চোপড়, খুদের ভাত, খৈল, ধানের গুড়া ও চিটা গুড়। প্রতিদিন রাজার খাবেরের তালিকায় খরচ হয় ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা। মাঝে মাঝে কাচা কলা, গাজর, আপেলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলও খাওয়ানো হয়। থাকার জায়গায় ২৪ঘন্টা ৩টি ফ্যান দেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে হাত পাখা দিয়ে রাজাকে বাতাস করতে হয়। প্রতিদিন ৩/৪বার গোসল করাতে হয়। বর্তমানে ৩৫মণের (১৪০০কেজি) এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তার ৬দাত। রাজ্জাক দাবি করেন এপর্যন্ত রাজাকে পালন করতে প্রায় ১৩লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং জেলায় তার গরুটিই সবচেয়ে বড়।
অপরদিকে, খানসামার যুবরাজ গরুর মালিক মো. জাকারিয়া হাবিব জানান, বিদেশে থাকাকালিন সময়ে তার পাঠানো টাকা দিয়ে একটি গাভী ক্রয় করে। সেই গাভীর একটি বাছুর জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় ‘যুবরাজ’। এখন গরুটির ওজন ৫৬০কেজি। রোদ ও তাপ থাকায় গরুটিকে দিনে দুইবার করে গোসল করাতে হয়। যুবরাজকে সন্তানের মতো করে লালন-পালন করেছি। গরুটিকে প্রতিদিন খড়, কাঁচাঘাস, খৈল, গমের ভূষি, চিটাগুড়সহ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়াই। সবসময় ঘরের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক ফ্যান চালানো হয়। যুবরাজকে বিক্রির জন্য ১০লাখ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। তবে পছন্দমতো দাম পেলে তাকে বিক্রি করে দেব।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি\ এবার বিক্রি হবে ‘দিনাজপুরের রাজা’! তবে এ রাজা কোনো রাজ্যের রাজা নয়। এ হলো আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত লালন-পালন করা বিশাল সুঠাম দেহের একটি ষাঁড়ের নাম ‘দিনাজপুরের রাজা’।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, সন্তানের মতো রাজাকে লালন-পালন করেছি। পরিবারের সবাই মিলে যতœ করে ষাঁড়টি বড় করা হয়েছে। এর চালচলন ও সুঠাম স্বাস্থ্য দেখে ষাঁড়টিকে তাঁরা ‘দিনাজপুরে রাজা’ বলে ডাকেন।
এদিকে রাজার চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের এআই টেকনিশিয়ান মো. জাকারিয়া হোসেন। তিনি বলেন, এটি পশু সম্পদ অধিদপ্তরের ১৬৮ নং প্রæভেন বøু’র সিমেনের হলেষ্টান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড়। ষাড়ের মালিক রাজ্জাক আমার বন্ধু মানুষ তার গরু খামারের প্রতি আগ্রহ থাকায় গরু গুলোর জন্য তাকে বিভিন্ন সময় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১৪মণ ওজনের শাহীওয়াল জাতের এক গরু।
আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুস মাষ্টার বলেন, আমার ছেলে জাকারিয়া বিদেশে থাকাকালিন সময়ে তার পাঠানো টাকা দিয়ে একটি গাভী ক্রয় করি। সেই গাভীর একটি বাছুর জন্ম হয়। নাম রাখা হয় ‘যুবরাজ’। একে আমরা অনেক যতœ করে লালন-পালন করি। কোরবানির ঈদে একে বিক্রি করতে চাই।
অপরদিকে খানসামা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, এবছর উপজেলায় খামারিরা কোরবানির ঈদের জন্য অন্তত ১৬ হাজার গরু প্রস্তুত করেছেন এবং উপজেলায় ১১ হাজার গরুর চাহিদা রয়েছে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট গরু রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতে পারবো। সৌদি আরব প্রবাসী সৌখিন খামারি প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়ায়ে রোগবালাইমুক্ত বিশাল একটি ষাঁড় লালন-পালন করেছেন। আশা করছি, কোরবানির ঈদে তিনি গরুটির ভালো দাম পাবেন। ভবিষ্যতে কেউ এরকম গরু লালন-পালন করতে আগ্রহী হলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে শলা-পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।