বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ পৌর এলাকা সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অটো রাইস মিলের ছাই ও দুষিত পানির পঁচা গন্ধের কারনে এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগিরা ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করে জানালেন, এসব অটো মিলের ছাই এবং পঁচা দুগন্ধময় পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। বিশেষ করে অটো মিলের ছাইয়ের কোনা কারো চোখে এসে পড়লে তাকে চোখের অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হয়। এছাড়া ছাই উড়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ীর ছাদে, টিনের চালায় গাছের পাতায়, বাড়ীর ওঠানে পড়ে কালচে দাগ পড়ে যায়। অনেকেই বাড়ীর ছাদে কাপড় শুকাতে দিলে পরে দেখে যে ছাইয়ের কারনে কাপড়ে কালো দাগ পড়েছে। অটো মিল সংলগ্ন বাসাবাড়ীতে মানুষের রান্না করা খাবারের মধ্যে ছাই দেখতে পাওয়া যায়। অপরদিকে এসব অটো মিলের নিজস্ব পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গন্ধময় পঁচা পানি ড্রেন দিয়ে পাশ^বর্তি নদীতে বা খালবিলে ফেলানো হচ্ছে, এতে করে নদীর বা খালবিলের পানি থেকে পঁচা দুগন্ধ বের হচ্ছে। এলাকার মানুষ রাস্তা দিয়ে হাটচলা করার সময় নাক মুখ ঢেকে চরাচল করছে। এসকল নদী বা খাল বিলে দুষিত পঁচা পানি জমাট থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ মরে যাচ্ছে। মাছে ভাতে বাঙ্গালীর দেশীয় প্রজাতি মাছের সুস্বাদু মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার কোল ঘেষে গড়ে ওঠা সোয়া নদীতে কয়েকটি অটো মিলের পঁচা দুগন্ধময় পানি এসে পড়ায় সেই নদীর পানি দুষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়াও ইশানিয়া ইউনিয়নের মুরারিপুর রাক্ষুসিনী নদীর কোল ঘেষে গড়ে ওঠা তালুকদার অটো রাইস মিল ও এসপি অটো রাইস মিলের দুষিত পানি নদীর পানিতে মিশে একাকার হয়ে নদীর পানিকে বিষাক্ত করে তুলেছে। একইভাবে হাট মাধবপুর আরজেডি অটো মিলের দুষিতে পানি পাশর্^বর্তী ব্রীজের খালে ফেলার কারনে সেই পানিইও দুষিত হয়ে গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে করে ঐ নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ মরে যাচ্ছে। বোচাগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি অটো মিলের মধ্যে সেতাবগঞ্জ পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে ২০/২৫টির মত।
এ বিষয়ে মুরারিপুর এস,পি অটো রাইস মিলের সত্বাধিকারি সুভাষ এর সাথে মুঠো ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সবাই যেভাবে চালাচ্ছে আমিও সেভাবে চালাচ্ছি। অটো মিলে পানি সোধানাগার ও সাইক্লোন মেশিন বসানো হচ্ছে না কেন প্রশ্নের জবাবে জানান, এটিপি নির্মানের জন্য সময় রয়েছে। সময়মত সব হবে। তবে তার মিলের চিমনি হতে নির্গত ছাইয়ের বিষয়ে তিনি সঠিক কোন মন্তব্য করেননি। দিনাজপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক জানান, বোচাগঞ্জে ৩৫টি অটো রাইস মিল থাকলেও কোন মিলেই নিজস্ব পানি শোধনাগার (এটিপি) নেই। দুই বছরের মধ্যে এটিপি নির্মান করার লক্ষ্যে তাদেরকে সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছিল এর মাঝে সেই সময় সীমা প্রায় শেষ হয়েছে। আগামীতে অটো রাইস মিলের উৎপাদন চালু রাখতে গেলে অবশ্যই এটিপি নির্মান করে তাদেরকে লাইসেন্স গ্রহন করতে হবে। এদিকে অটো রাইস মিলের চিমনি হতে নির্গত ছাই পরিবেশের ও জনসাধারনের চলাচলে ব্যাপক ক্ষতি করছে, সেই বিষয়েও অটো মালিকগনকে ছাইক্লোন স্থাপনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে করে জনসাধারনের চলাচলে ছাইয়ের কোন প্রভাব পড়বে না এবং বাসাবাড়ীতে ছাই প্রবেশ করবে না। সুধিজনেরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, প্রতিটি অটো রাইস মিলে পানি শোধনাগার স্থাপন করা হলে বোচাগঞ্জ উপজেলার চলমান জলধারা সুরক্ষিত থাকবে এতে আমাদের আমিষ চাহিদা পুরনে সহয়াক ভুমিকা পালন করবে, কিন্তুু অটো রাইস মিলের দুষিত পঁচা দুগন্ধযুক্ত পানি নদীতে (খাল) প্রবেশ করায় এলাকা যেমন দুষিত হচ্ছে তেমনি দেশীয় মাছের প্রজনন নেই বললেই চলে।