ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে সূর্য্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সূর্য্য পূজা।সূর্য্য পূজাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ছট পূজা। প্রতিবছর কালী পূজার পর শুক্লা পক্ষের ষষ্টি তিথিতে সূর্য্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীর তীরে দুই দিনব্যাপী এই পূজা উদযাপন করা হয়। একে অনেকে সূর্যস্নানও বলে থাকেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পুনর্ভবা নদীর তীরে দুইদিনব্যাপী সূর্য্য পূজা (ছট পূজা) শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে শেষ হয়েছে।
সূর্য্য পূজাকে (ছট পূজা) কেন্দ্র করে পুনর্ভবা নদীর তীরে হিন্দু ধর্মালম্বী সব বয়সি নারী ও পুরুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়। ঢাক আর ঢোলের তালে মুখরিত ছিল নদীর তীরের পূজাস্থল।আলোক ঝলমল আলোকসজ্জাসহ কিশোর-কিশোরীদের নানা রকম আতশবাজী আর ছুড়ছুড়িতে আলোকিত ছিল পুরো পূজা এলাকা। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন খেলনা ও খাওয়ার দোকান নিয়ে বসে সেখানে।
সূর্য পূজা করতে আসা বিপ্লব পোদ্দার, শিলা পোদ্দার, মালা সরকার ও শুক্লা সাহা বলেন, স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গলের জন্য সূর্য্য দেবতার কৃপালাভের আশায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা নিজ নিজ বাড়ী থেকে ডালায় কূলা ভর্তি বিভিন্ন ফলমূল, নিজের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি, মিষ্টান্ন, আটার তৈরি ঠেকুয়াসহ বিভিন্ন প্রসাদ সাজিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নদীর তীরে সূর্য্য দেবতার কৃপা লাভের আশায় সূর্য্যর দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেন উপবাস থাকা নারীরা। সূর্য্য অস্ত যওয়ার পূর্ব মুহুর্তে পূন্যার্থীরা নদীতে গোসল এবং কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে সূর্য্যরে দিকে মুখ করে কুলায় সাজানো প্রসাদ নিয়ে পূজা শুরু করে। সূর্যাস্তের পর নারীরা কূলার প্রসাদ ডালায় উঠিয়ে নিয়ে ফিরে যান নিজ নিজ বাড়ীতে। পরদিন শুক্রবার নদীর তীরে কূলার প্রসাদ সাজিয়ে উপস্থিত হয়ে সূর্য্য উদয় হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত থেকে একই নিয়মে পূজা শুরু করেন তারা। সূর্য উদয় হওয়ার পর সূর্যকে প্রণাম করে নদীতে স্নান এবং সরবত পানের মধ্যে দিয়ে শেষ করেন সূর্য্য পূজা। প্রসাদ অর্ঘ শেষে বিবাহিতা নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
একজন পূরহিত শ্রী সুদামা উপাধ্যয় বলেন, সূর্য্য পূজা (ছট পূজা) মূলত অবাঙালি হিন্দু ধর্মালম্বী নারীরা স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গলার্থে সূর্য্য দেবের কৃপা লাভের আশায় নদীর তীরে সূর্য্য পূজা (ছট পূজা) করে থাকেন। এই সূর্য্য পূজা (ছট পূজা) ভগবান শ্রী রামের স্ত্রী সিতা মইয়া এবং পার্বতী দেবীও পালন করেছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যগন দায়িত্ব পালন করেন বলে জানায় দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ওসি মতিউর রহমান।