বিকাশ ঘোষ,বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ইতোমধ্যে লাউ চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন চাষিরা। উপজেলার সদর কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামে লাউ চাষ বাড়ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলোর গুণগতমান ঠিক রাখায় প্রতিটি গাছের ডগায় প্রচুর পরিমাণে লাউ ধরেছে। এই পদ্ধতিতে লাউ চাষে রোগবালাই অনেক কম ও ফলনও ভালো হয়। চাষিরা বলছেন, দেশীয় পদ্ধতিতে কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়া চাষ করে ইতিমধ্যে এলাকায় সফল লাউ চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এবং লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে লাউয়ের চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে কৃষকেরা। মাচায়-মাচায় ঝুলছে নানান রঙের লাউ। স্বল্প জমিতে অধিক হারে লাউয়ের চাষ করতে পেরে খুশি চাষিরা। এ উপজেলায় লাউ রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের কবিরাজ হাট এলাকার রশিদুল ইসলাম (৩৬) জানান,এরই মধ্যে সফল লাউ চাষি হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন তার কাছে। এই মৌসুমে এক বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ করে প্রথম বার প্রায় ৫০০টি লাউ বাজারে বিক্রি করেছি। প্রতিটি ৩০-৩৫ টাকায়, এতে ১৭ হাজার ৫ শত টাকা পেয়েছি। তার জমিতে আরও ২০ হাজার টাকার মতো লাউ আছে বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের শচিন চন্দ্র রায় বাড়তি আয়ের আশায় মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ শুরু করেছে। তিনি জানান, এবার ৭০ শতাংশ জমিতে লাউয়ের চাষ করে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় করেছে। উপজেলার ৩নং শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা লাউ চাষি হাসিফুল ইসলাম জানান ,১৫ শতক জমিতে লাউ চাষ করে এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। এখনও লাউয়ের গাছ তরতাজা আছে। সেখান থেকে অনেক টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন। এক বিঘা জমিতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও জানান,লাউয়ের চাষাবাদ করে জমি থেকে যেমন আশানুরূপ ফলন পাচ্ছি সেইসঙ্গে বাজারে দামও পেয়ে আসছি ভালো। তবে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যদি একটু সহযোগিতা পেতাম, তাহলে লাউ চাষ করে আরো বেশি লাভবান হতাম। কবিরাজ হাটের পাইকারী ব্যবসায়ী সাহেব আলী বলেন, বীরগঞ্জের উৎপাদিত লাউ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হচ্ছে। বর্তমানে উৎপাদিত লাউ কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সন্দীপ, বগুড়া, কুড়িগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় শীতকালীন সবজি লাউ চাষে এবছর ৯০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে
৭৫ হেক্টর জমিতে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সরজমিনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ শরিফুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, বীরগঞ্জ উপজেলার মাটিতে লাউ চাষের জন্য উপযোগী। লাউ চাষে লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বছরের সব সময় অর্থাৎ বার মাসেই লাউয়ের চাষ করা যায়। ফসল উৎপাদনে কৃষক যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সে জন্য কৃষি অফিস সর্বদা খোঁজ খবর রেখে পরামর্শ প্রদান করছে।