বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে গত দুই তিন আগে কয়েক পশলা বৃষ্টি যদিও জনজীবনে কিছুটা স্বস্থি ফিরিয়েছে। কিন্তু কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিয়েছে তীব্র তাপদাহ আর অনাবৃষ্টি। গত ১৫দিন ধরে পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেতের সোনালী শীষের ধানগুলো ছিদ্র করে ফেলছে, ধানে সাদা দাগ ও পাতা গুলি জ্বলে শুকিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থায় ইরি-বোরো ধানে দেখা দিয়েছে পাতা মোড়ানো মাজরা পোকা। পোকার আক্রমণে দিনদিন ধান গাছের পাতা হলুদ বর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে গোড়া পচা রোগ দেখা দেওয়ায় ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। কিন্তু ফসল রক্ষার কোনো উপায় না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন তারা। চাষিরা বলছেন, পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক জমিতে ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাদের আশঙ্কা, সময়মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার ইরি-বোরো উৎপাদন ব্যাহত হবে। উপজেলার ১নং শিবরামপুর, ৩নং শতগ্রাম, ৫নং সুজালপুর,৬নং নিজপাড়া, ১০নং মোহনপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সরজমিনে ধান ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ধান ক্ষেতে শীষ পরিপক্ব হয়েছে কেউ কাটতে শুরু করেছে, কেউ ১০-১২ দিন পর ঘরে তুলবে ধান। ঠিক তার আগে এই পোকার আক্রমণে দিশেহারা স্থানীয় অনেক কৃষক। কৃষক প্রতি বিঘা জমিতে ৪০/৪৫ মন ধান পাওয়ার আশা করলেও বর্তমান পরিস্থিতে ১৫/২০ মনের বেশী ধান পাওয়ার আশা করতে পারছেনা।
এ ব্যাপারে মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের কৃষক হাসেন আলী শেখ বলেন, কয়েক দিন আগে ধান ভালো ছিল, সপ্তাহের মধ্যে খুব রোদ আর গরম এবং বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পোকার আক্রমণ শুরম্ন হয়েছে। ধান চাষে হালভাড়া, মেশিন ভাড়া,সার,বিষ,রোপণ করা সহ আমার সব মিলে বিঘায় ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এখন পোকার আক্রমণের কারণে খরচের টাকা মনে হয় উঠবে না।
অপর দিকে একই এলাকার কৃষক বাবু লাল মার্ডী বলেন আমি ৫০ শতক জমিতে ধান আবাদ করেছি এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু এখন পোকার আক্রমণের কারণে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে আমি এমনিতেই খুব দুঃখ কষ্টে, অনেক পরিশ্রম করে ধান আবাদ করেছি কিন্তু পোকার আক্রমণে অর্ধেক টাকা ঘরে আসবে না এতে আমি খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবো। মোহম্মদপুর ইউনিয়নের তেলীপাড়া গ্রামের আবদুল কাদের জানান, আমি নাইট গাডের চাকুরী করার কারণে চার পাচ দিন ক্ষেতে যেতে পারিনি এর মধ্যে পোকা আক্রমণ করে আমার ক্ষেতের অর্ধেক ধান খেয়ে ফেলেছে। বর্তমানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ খুব বেড়ে গেছে। এখন কোন রকমে বিষ দিয়ে বাকী ধান বাচানোর চেষ্টা করছি। একই গ্রামের দেলোয়ার এবং রবিনের ২৫ শতক করে জমির ধানের একই অবস্থা। সুজালপুর ইউনিয়নের উত্তর সুজালপুর গ্রামের কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, কারেন্ট পোকার আক্রমনে আমার ধান ক্ষেতে এ পর্যন্ত ৬বার বিষ দিয়েছি, ১বিঘা জমিতে প্রতিবার বিষ দিতে প্রায় ১হাজার টাকা লাগে। সরকারের কাছে আমার দাবি আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করম্নক। তাহলে আমরা একটু উপকৃত হব। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শরিফুল ইসালামের সাথে দেখা করার জন্য ৩দিন গিয়েও তার দেখা মিলেনি, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কারেন্ট এবং বস্নাষ্টের আক্রমণের কথা মানতে নারাজ।