বৃহস্পতিবার , ৫ জুন ২০২৫ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিরিরবন্দরে ব্যস্ত কামারশিল্পীরা

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
জুন ৫, ২০২৫ ১২:০৫ অপরাহ্ণ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারশালাগুলো। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে কামারশালাগুলো। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বৃদ্ধি পেয়েছে কামারশিল্পীদের ব্যস্ততা। কোরবানির পশুর মাংস প্রস্তুত করার সামগ্রী বা বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রপাতি তৈরিতে দিনরাত চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কামারশিল্পীরা এবং ক্রেতারা। এসবের চাহিদা মেটানোর জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন কামারশিল্পীরা। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে কামারের দোকান থেকে দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি বানিয়ে অথবা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই তাদের ঘরে থাকা পুরনো দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি শান বা ধার করাচ্ছেন। কামারশালাগুলোতে গেলেই এখন চোখে পড়ে কামারশিল্পীদের ব্যস্ততম জীবনচিত্র। কেউ কৃত্রিম বাতাসের তালে তালে পোড়াচ্ছেন কয়লা। কেউ জ্বালাচ্ছেন লোহা আবার কেউ পোড়া লোহা হাঁতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন। কয়লার আগুনে লোহা পেটাতে পেটাতে ঘাম ঝড়ছে শ্রমিকদের। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও বিরাম নেই তাদের। তারা আপন মনে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতির নিকট হার মানছে তাদের পৈত্রিক এ পেশা। বছরের অন্যান্য সময় টুকটাক কাজ থাকলেও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বরাবরই ব্যস্ততা বৃদ্ধি পায় তাদের। পশু জবাইয়ের ধারালো অস্ত্র তৈরি ও ক্রয় করতে লোকজন ভিড় করছেন কামারশালাগুলোতে। কামারের দোকানগুলোতেও শোভা পাচ্ছে পশু জবাইয়ের বিভিন্ন উপকরণ। লোহার গুণাগুণের ও পণ্যের উপর ভিত্তি করে যন্ত্রপাতির দাম ধরা হয়েছে সর্বনি¤œ ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। দৈনন্দিন জীবনযাপনের কাজসহ কোরবানির পশুর মাংস কাটার যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি তৈরিতে কামারদের মধ্যেও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতিযোগিতা। অনেকের আবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশা। কামারদের তৈরি যন্ত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-দা, বঁটি, চাপাতি, ছুরি, কোদাল, কুড়াল, হাঁসুয়া ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সামগ্রী। যা ঈদুল আজহার কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয়। বর্তমানে লোহার দাম বৃদ্ধি, লাগামহীন বাজার ব্যবস্থাপনা ও স্টেইনলেস স্টিলের যন্ত্রপাতি সরবরাহ থাকায় পরিশ্রমের তুলনায় কম মূল্য পাওয়া এসব সামগ্রীর কারণেই বছরের বেশির ভাগ সময় কামারশিল্পীদের কর্মহীন জীবনযাপন করতে হয়। বর্তমান বাজারে কামারশিল্পীদের তৈরি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমে যাওয়ায় হারাতে বসেছে তাদের পৈত্রিক পেশা। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে এসব সামগ্রীর চাহিদা থাকায় ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের।
উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা রানীরবন্দরে কথা হয় কামারশিল্পী রবিন রায় (৩৫)’র সাথে। তিনি বলেন, লোহা ও কয়লার মূল্যসহ শ্রমিকের মজুরি সবই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দামেরও পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদের আগে পরিশ্রম করলে কিছুটা লাভ হয়। এটা হাতের কাজ, লাভ নির্ভর করে পরিশ্রমের ওপর। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতির মতো ধারালো সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তাঁর মতো সেখানকার অন্যান্য কামারশিল্পীরাও এই ঈদকে ঘিরে এসব ধারালো সরঞ্জাম তৈরি করছেন। তিনি আরও জানান, স্প্রিং (পাকা) লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব সরঞ্জাম। স্প্রিং লোহার তৈরি সরঞ্জাম বেশি টেকসই হয়, আর দামও বেশি। অন্যদিকে, কাঁচা লোহা অপেক্ষাকৃত সস্তা হলেও মানে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে। এছাড়াও অ্যাঙ্গেল, রড বøক বার ও গাড়ির পাত ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে গোশত বিভিন্ন কাটার সরঞ্জাম। বর্তমানে একটা ঈদের জন্য সারাবছর আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। আগে এমন অবস্থার শিকার হইনি কখনো।
উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের দেউরিপাড়ার কামারশিল্পী রাজ কুমার রায় (৬৫) জানান, একসময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। ফলে তাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। তবে কোরবানির ঈদের সময় তারা একটু আশাবাদী হন। এখন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয়। কারণ এই সময় তাদের আয়-রোজগার ভালো হয়। একটু বেশি আয়-রোজগারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
একই এলাকার কামারশিল্পী প্রদীপ রায় (৪০) বলেন, বর্তমানে কয়লার দাম পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে অস্ত্র বা যন্ত্রপাতি তৈরির খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সরাসরি তাদের লাভের ওপর প্রভাব ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, আগে কম দামে কয়লা ক্রয় করতাম। এখন সেই একই পরিমাণ কয়লা প্রায় দ্বিগুণ দামে ক্রয় করতে হয়। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রি করলেও আগের মতো লাভ থাকছে না। কোরবানির ঈদে যেভাবে মানুষ ধারালো অস্ত্র তৈরি ও শান দিতে আসেন তা কিছুটা আশার আলো দেখালেও খরচ বৃদ্ধির কারণে এখন আর আগের মতো আয়-রোজগার হয় না। তবুও তারা পৈত্রিক এই পেশাকে ভালোবেসে ধরে রেখেছেন। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিত, তাহলে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা অনেকেরই উন্নতি হতো।
কামারশালার কর্মচারী বালাপাড়ার রাশেদুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলামের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা দৈনিক ৫০০ টাকা হাজিরা হিসেবে কাজ করি। এখানে কাজ করে যে টাকা বেতন হিসেবে পাই তা দিয়েই আমাদের সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতে হয়। এই টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। লোহা পিটিয়ে শক্তি ক্ষয় করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটাছেঁড়া করার সামগ্রী তৈরি করেন তাদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে এমনটা মনে করে সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

বোচাগঞ্জে পূজামন্ডপ সমুহের নিরাপত্তা আইন শৃঙখলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ক প্রস্তুতিমুলক সভা

ঘোড়াঘাটে সড়ক দূর্ঘটনায় একই পরিবারের ২ জন নিহত, আহত ৩ জন

বীরগঞ্জে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কায় কিশোর নিহত, আহত -১

শাশুড়িকে পু’ড়িয়ে মা’রার  অভি’যোগে জামাই গ্রে’প্তার

শাশুড়িকে পু’ড়িয়ে মা’রার অভি’যোগে জামাই গ্রে’প্তার

বিরলে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উপলক্ষ্যে এ্যাডভোকেসী সভা

বীরগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে র‍্যালী ও আলোচনা সভা

বোচাগঞ্জে ইটভাটার পেটে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি, কমছে আবাদি জমির পরিমান

সাতপাকে বাঁধা পড়লেন উত্তম কুমারের আরেক নাতি

নোয়াখালীতে এবার চার টুকরো করা হলো গৃহবধূকে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থী অটোপাস পেলেন