বৃহস্পতিবার , ২৬ আগস্ট ২০২১ | ২৮শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।। স্বস্তি-অস্বস্তি দুই-ই আছে

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
আগস্ট ২৬, ২০২১ ১:২২ অপরাহ্ণ

করোনা মহামারির মধ্যেও একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের পরিমাণ। মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার হিসাবে দেশের এ রিজার্ভ দিয়ে ১২ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অর্থনীতির সূত্র বলছে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি বেশি হলে বৈদেশিক দেনা পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা যখন কমে যায় ও প্রবাহ বেড়ে যায়, তখন উদ্বৃত্ত অর্থ মজুত থাকে। আর বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় রিজার্ভ। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সাধারণত কোনো দেশের তিন মাসের বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানোর মতো মজুত থাকতে হয়। এর কম থাকলে ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করা হয়। আমদানি কম থাকায় বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে বিনিময়হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে, যা রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতির জন্য স্বস্তি ও অস্বস্তি দুটোই আছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক মাত্রায় থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা পান। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। তবে এই রিজার্ভ যদি কোনো কাজে না লাগে সেটাকে খুব একটা ভালো বলা যাবে না। বরং রিজার্ভ যত বাড়বে ডলারের দাম তত নিম্নমুখী হবে। এতে করে রপ্তানিকারকরাও নিরুৎসাহিত হবে। তবে বিনিয়োগ স্থবির অর্থনীতিতে শুধু শুধু রিজার্ভ বাড়িয়ে তেমন লাভ নেই। রিজার্ভ বাড়লে নিট বৈদেশিক সম্পদ (এনএফএ) বেড়ে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে এবং তার বিপরীতে পরিশোধ করা টাকা পুনরায় রিভার্স রেপোর মাধ্যমে শুষে নিলে মূল্যস্ফীতি ঘটবে না। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে। রেকর্ড পরিমাণ এ রিজার্ভ কাজে না লাগলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর সালেহউদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, রিজার্ভ যে কোনো দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো। কিন্তু সে রিজার্ভ যদি কাজে না লাগে তবে তা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ রিজার্ভের একটি বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। ডলারে আসা রেমিট্যান্সের অর্থ গ্রাহকদের দিতে হয় টাকায়। আর এই অর্থের অধিকাংশ ব্যয় হয় অনুৎপাদনশীল খাতে। এ ছাড়া, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও কমছে। এ কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার যেহেতু ছোট, তাই এই রিজার্ভকে বেশি দাবি করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, ‘একটি দেশের যে কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি মেটানোর জন্য মোটামুটি তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাটাই স্বস্তিদায়ক। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে অন্তত ১১ মাসের ব্যয় মেটানোর মতো। এটা দেশের জন্য নেতিবাচক।’ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে রিজার্ভ বৃদ্ধি অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভালো দিক হলেও এ রিজার্ভ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এটাকে কাজে লাগাতে না পারলে পরবর্তীতে এটা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’ এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। ঋণ হিসেবে এই অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নজরদারি না থাকলে তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ মার্চ রিজার্ভ ফান্ড থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন ফান্ড (বিআইডিএফ) গঠন করা হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরে একটি চ্যানেল ড্রেজিং প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় পাঁচ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা (৫২৪ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড) ঋণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সরকারের অর্থ বিভাগ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সমগ্র ব্যাংকিং খাতে করপোরেট সুশাসনের অভাব রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে- রিজার্ভ থেকে নেওয়া ঋণের গুণগত মান কে নিশ্চিত করবে? সঠিক তদারকির অভাবে এই তহবিল সংকটে পড়তে পারে।’ এ বিষয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিটি সুপারিশ করেছে, শুধুমাত্র সরকারের কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেই রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া উচিত। কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তারা কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্প বলতে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বুঝিয়েছেন, যেগুলো সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত। সেতু, মহাসড়ক, বন্দর ও পরিবেশবান্ধব বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে সর্বোচ্চ দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ বরাদ্দ করবে। এই তহবিলের আওতায় থাকা ঋণের পরিমাণ পুরো রিজার্ভের ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হচ্ছে জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য জমাকৃত অর্থ। স্থিতিশীল মুদ্রা বিনিময়হার বজায় রাখা, রপ্তানি মূল্য প্রতিযোগিতামূলক রাখা, দুর্যোগকালে অর্থের তারল্য বজায় রাখা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখা। তিনি বলেন, ‘আমরা রিজার্ভের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির হারে সন্তুষ্ট। কিন্তু এই ধারা সব সময় একরকম থাকবে না।’ সাবেক এই গভর্নর বলেন, ২০০৭-০৮ দেশ খাদ্য সংকটে ভুগছিল এবং বিভিন্ন ব্যাংকে তখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ছিল। আমদানির খরচ জোগাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করে ঋণদাতাদের সহায়তা করেছিল। এরকম সমস্যা আবারও হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি জানিয়েছে, সরকারকে অবশ্যই সভরেইন গ্যারান্টি দিতে হবে, যে ঋণের দায়দায়িত্ব সরকারই নেবে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে পারবে। যদি কোনো প্রকল্প সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওইসব ব্যাংকের সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা অর্থ নিয়ে নিবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জনগণের অর্থ সুরক্ষিত করতে সরকারের দেওয়া সভরেইন গ্যারান্টি যথেষ্ট না। কারণ আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে।’ কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও অন্যান্য প্রকল্প এই রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক করেন তিনি। বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহারের এই পদ্ধতি অপ্রয়োজনীয়। কারণ প্রকল্পগুলো চাইলেই বর্তমান ব্যবস্থাতেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে প্রকল্পের জন্য অর্থ খুব সহজেই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে জোগাড় করা সম্ভব।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটির সুপারিশে ঋণ পরিশোধের জন্য পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১৫ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো দুই থেকে তিন শতাংশ সুদে এই ঋণ সুবিধা নিতে পারবে। ঋণদানের পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রকল্পগুলো সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি ব্যাংকগুলোকেই ঋণ দেবে। এরপর ব্যাংক থেকে ঋণ পাবে প্রকল্পগুলো। এক্ষেত্রে লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার্ড রেটের সঙ্গে মিলিয়ে সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ব ব্যাংকের হ্রাসকৃত হার কিংবা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারণ করা সুদের হারও ব্যবহার করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা তাদের সুপারিশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এখন ব্যাপারটি পুরোপুরি সরকারের হাতে। তারা চাইলে আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, আবার না-ও করতে পারে।’ অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে শ্রীলংকার পর্যটন খাত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এই খাতের অবদান ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা এখন অনেক কমে গেছে। ফলে বৈদেশিক বিনিময়ে প্রতিনিয়ত মান হারাচ্ছে দেশটির মুদ্রা রুপি। এতে টান পড়েছে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে। এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ডলার ধার করছে শ্রীলংকা। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারও ২০ কোটি ডলার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে দেশটিকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এই ডলার দেওয়া হবে। এর বিপরীতে দেড় থেকে ২ শতাংশ সুদ পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, এ নিয়ে পর্ষদ নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আরও অনেক প্রক্রিয়ার পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

দিনাজপুরে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সন্তুষ্ঠ এনএসবি টিউবেকটমি গ্রহীতা অবহিতকরণ কর্মশালা

চিরিরবন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদন্ড

কাহারোলে বোরো ধানে বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

চিরিরবন্দরে নিখোঁজের একদিন  পর মিলল কৃষকের লাশ

চিরিরবন্দরে নিখোঁজের একদিন পর মিলল কৃষকের লাশ

খানসামার সেই কুমারপাড়ায় দুর্গোৎসবের আমেজ নেই

দিনাজপুর সদর উপজেলা বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় পৌরসভা প্রথম

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে দুইদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ডবয় করেন ইসিজি, প্রেসক্রিপশন লেখেন সহকারী !

ঘোড়াঘাটে শহীদ দিবস পালিত