দিনাজপুর পৌরসভাধীন মির্জাপুর খ্রিষ্টান পাড়ার তরুণ হিমান ম‚র্ম‚ প্রমাণ করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে দারিদ্র্য কোনো বাধা নয় পারিবারিক দুরবস্থার মধ্যেও তিনি নার্সারি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্প ও মৃৎশিল্পকে পুঁজি করে গড়ে তুলেছেন স্বাবলম্বিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস মির্জাপুর খ্রিষ্টান পাড়ায়। এখানেই হিমান ম‚র্ম‚র শৈশব-কৈশোর কাটে। পরিবারের অভাবের কারণে বেশি দ‚র লেখাপড়া করতে পারেননি হিমান মুর্মু মাত্র দশম শ্রেণী পর্যন্ত থেমে যায় পোড়াশনা।
তাঁর পিতা তারসিউস ম‚র্ম‚ ২০০৬ সালে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের হাল ধরতে বড় ভাই রাজশাহীতে পাড়ি জমান, ছোট ভাই দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। দুই বোন বিবাহস‚ত্রে চলে যান শ্বশুরবাড়িতে। সংসারের হাল ধরেন হিমান ম‚র্ম‚।
প্রথমে দিনমজুরি করে সংসার চালালেও স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই বাড়ির আঙিনায় মাত্র ৯শতক জমিতে শুরু করেন নার্সারি। এখানে চিরতা, হারজোরা, হার্বাসো, সাদা লজ্জাবতীসহ নানা ঔষধি গাছের চারা তৈরি ও বিক্রি করেন তিনি। সেই সাথে তিনি আবাদ করে থাকেন, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, বরবটি, সিম, ঝিঙ্গা, কাঁকরোল, পুঁইশাক, পেঁপে, কাঁচামরিচ, ডাটাশাক, বস্তায় আদা চাষ করে বিক্রয় করেন তিনি।
পাশাপাশি মাছ ধরার জাল, বাঁশের বাঁশি, ঝাড়ু, মুরগির খাঁচা, নিত্যপ্রয়োজনীয় বাঁশজাত উপকরণ তৈরি করেন। কাঠ দিয়ে তৈরি করেন গিটার, ধোতারা, হারমনিয়মের মতো বাদ্যযন্ত্র।
শুধু তাই নয়, মৃৎশিল্পেও তাঁর অবদান সমানভাবে প্রশংসনীয়। মাটি দিয়ে তৈরি করছেন মাছ, গরু, বক, হাতি, দোয়েল পাখি, ডলফিন, বনরুইসহ নানা কারুকাজ। তাঁর এসব উদ্যোগ থেকে মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, হিমান ম‚র্ম‚ আজ সবার জন্য অনুপ্রেরণা। অদম্য পরিশ্রম আর দৃঢ় মনোবল থাকলে সমাজের অবহেলিত তরুণরাও স্বাবলম্বী হতে পারে এই বার্তাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।
মির্জাপুর খ্রিস্টান পাড়া এলাকার প্রবীণরা বলেন, হিমান মুর্মুর মতো তরুণ উদ্যোক্তারা গ্রামের পরিবেশ বদলে দিচ্ছেন। তবে এ উদ্যোগ আরও টেকসই করতে হলে সরকারি সহায়তা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ প্রয়োজন। প্রবীণ বাসিন্দারা আরও বলেন, এ ধরনের নার্সারি গড়ে উঠলে আমাদের এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে হিমান মুর্মুর মতো আরও অনেকে এগিয়ে আসবে।