ঠাকুরগাঁও:
ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপক হারে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও ব্রনকাইটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও ব্রনকাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে ওষুদের তীব্র সংকট। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বাহির থেকে টাকা দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে ওষুধ। হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে এমনটাই বলছেন রোগীর স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন-সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থায় ৩২টি আইটেমে চাহিদা দিয়ে সময়মত ওষুধ না পাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে ।
বৈরী আবহাওয়া ও তাপামাত্রা ওঠা-নামার কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুদের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে।
শিশু ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স দিলরুবা আকতার জানান, গত ২৪ ঘন্টায় এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৫০ জন শিশু। এনিয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭০জন শিশু। আর গত সাত দিনে ৫শ’র বেশি শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৪০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ৭০টি বেড থাকলেও থাকছে ১৭০জন শিশু রোগী। বেড়ে জায়গা না পেয়ে মাঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
এদিকে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতাল থেকে অধিকাংশ ওষুধ সরবরাহ না পেয়ে বাহির থেকে কিনে আনছে। এতে শিশু রোগীদের নিয়ে বিপাকে পরেছে অসহায় দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষ।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আনোয়ারা বেগম বলেন, তার ৭ মাসের শিশু সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। গত তিন দিন হাসপাতালে অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে শুধু স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে, অবশিষ্ট ওষুধ দোকান থেকে কিনে আনতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
তার মতোই সদর উপজেলার ভেলাজান থেকে আসা মহসিন আলী বলেন, গত চার দিন ধরে তার ছেলেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন, এতে একহাজার পাঁচশত টাকার ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়েছে।
একদিকে রোগীদের জন্য ওষুধ সরবরাহ দিতে না পারা এবং জনবল সংকটে কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে হিমসিম খাচ্ছেন বলে জানান হাসপাতালের স্টাফ নার্স দিলরুবা আকতার।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ নাদিরুল আজিজ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রোগ নিয়ন্ত্রণে এন্টিবায়োটকসহ বেশ কয়েকটি ওষুধের সংকট আছে। ওষুধ সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, বগুড়ায় অবস্থিত সরকারি ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগ কো:লি: এ চাহিদা অনুয়ায়ী ৩২ ধরনের ওষুধ সরবরাহ চেয়ে এ বছরের গত ১৬ মার্চ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই ওষুধগুলো সরবরাহ হয়নি। এই ৩২ ধরনের ওষুধের মধ্যে ২০ ধরনের ওষুধ হাসপাতালে নেই বললেই চলে। না থাকা ২০ ধরনের ওষুধের মধ্যে এন্টিবায়োটকসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন ওষুধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
আড়াইশ শয্যার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল চলছে ১’শ শয্যার জনবল দিয়ে। এই হাসপাতালে ঠাকুরগাঁও জেলা ছাড়াও পাশ^বর্তী পঞ্চগড়, নীলফামারী এবং দিনাজপুরের তিনটি উপজেলার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।