আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে তৈরি করা হচ্ছে প্রতিমা দুয়ারে কড়া নাড়ছে দেবী দুর্গার আগমন বার্তা। মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠ শোনার অপেক্ষায় ভক্তকূল।
আর মাত্র কয়েকদিন পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এরই মধ্যে শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় পূর্ণরূপ পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সব প্রতিমা।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ৫৪ টি প্রতিমালয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। ১১অক্টোবর পঞ্চমী তিথিতে শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
কারিগররা তাঁদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া দিয়ে দিন-রাত কাজ করেই চলেছেন। তাঁদের হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে প্রতিমা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। প্রতি বছর অশুভ শক্তির বিনাশকল্পে দেবী দুর্গা এই ধরাধামে আবির্ভূত হন।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, সমাজ থেকে সব অন্যায়-অবিচার, গ্লানি ও বৈষম্য দূর করার জন্যই আয়োজন করা হয় শারদীয় দুর্গাপূজার।
উৎসবের পূর্ণতা পায় যাদের হাতে সেসব প্রতিমাশিল্পীর এখন কাটছে ব্যস্ত সময়। মায়ের প্রতিমা গড়তে গিয়ে দম ফেলার ফুরসত নেই তাঁদের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ আর মহিষাসুর সঙ্গে দেবীর বাহন সিংহকে গড়তে হবে।
প্রতিমাশিল্পীদের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেল রাণীশংকৈল হাটখোলা
প্রতিমালয়ে গিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত প্রতিমাশিল্পী খোকন পাল। তৈরি করা হয়েছে দুর্গার কাঠামো। খড় আর কাদামাটির মিশ্রণে দুর্গার পূর্ণ অবয়ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি একাগ্রচিত্তে। সহযোগীরা ব্যস্ত লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ প্রতিমা গড়তে। তাদের ব্যস্ততার এ চিত্র চোখে পড়ে উপজেলার সব প্রতিমালয়ে।
খোকন পাল জানান, সময়ের সঙ্গে প্রতিমার গড়নেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাই প্রতিমাশিল্পীদের অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়। মাথায় রাখতে হয় মন্দিরের ঐতিহ্য ও সাজসজ্জার বিষয়টিও। সেভাবেই ফুটিয়ে তুলতে হয় প্রতিমার অবয়ব।
প্রতিমাশিল্পী গনেশ পাল জানান, প্রতিমার সাজসজ্জায় আগের তুলনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একসময় আলাদা আলাদা কাপড় ও অলংকার দিয়ে সাজানো হতো প্রতিমা। এখন মাটি দিয়ে সবকিছু সাজানো হয়। কাপড়সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাটির কাজের দিকে ঝুঁকেছেন তারা।
গনেশ পাল আরও জানান, প্রতিমা তৈরির খরচ প্রতিবছরই বাড়ছে। বর্তমানে আকারভেদে একেকটি প্রতিমা তৈরি করতে ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কোনো কোনো মণ্ডপে লাখ টাকা খরচ করেও প্রতিমা তৈরি করা হয়। কাজভেদে একেকজন কারিগর মৌসুমের প্রতি মাসে আয় করেন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
জানা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের মূল ব্যস্ততা শুরু হয় ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে। মনসা পূজার পর থেকে বিভিন্ন মন্দির থেকে ডাক আসতে থাকে তাঁদের কাছে। ডাক পেয়ে তাঁরা ছুটে যায় জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিমালয়ে আগেভাগে প্রতিমা তৈরি করে রাখা হয়। বৈশাখে তেমন ব্যস্ততা থাকে না। শিল্পীরা কাজ শুরু করেছেন অনেক আগেই। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন। আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিমার অর্ডার হয়েছে। তবে এখনো শুরু হয়নি রঙের কাজ।
উপজেলার বিভিন্ন প্রতিমালয়ের প্রতিমাশিল্পীরা জানান, কোনো কোনো মণ্ডপে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করে মাটির কাজও শেষ হয়েছে। ১৫ দিন পর থেকেই শুরু হবে প্রলেপ ও রং দেওয়ার কাজ। সব কাজ শেষ হবে পূজা শুরুর তিন-চার দিন আগে। এরপর ভক্তরা অপেক্ষায় থাকবেন দেবী দুর্গার আগমনের। মণ্ডপে স্থাপনের পর পুরোহিত করবেন প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা। বছরের এই একটা সময় প্রতিমা তৈরি করেই মূলত সারা বছর চলার জন্য সঞ্চয় করে রাখতে হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ রাণীশংকৈল উপজেলা শাখার সভাপতি শ্রী ছবিকান্ত দেব বলেন,পূজা উদযাপনে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে সাত্ত্বিক পূজা, ঢাক-ঢোল বাঁশি,কাঁসার শব্দে আরতী, ধর্মীয় সংগীতানুষ্ঠান,গীতা পাঠ প্রতিযোগিতা,ভক্তদের মাঝে সীমিত পরিসরে প্রসাদ বিতরণ, বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির মতো কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।