আল ফয়সাল অনিক,রুহিয়া(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ায় আলুর ভালো ফলন হলেও বাজারে দাম না থাকায় লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ও পাইকারি প্রতি কেজি আলু জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা। এতে খরচের তুলনায় লোকসান বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলার ২৭ হাজার ৬৪৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই হাজার সাতশ ৭০ হেক্টর জমির আলু বাজারে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে (২৪৭ শতক) আলুর উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৪ মেট্রিক টন। এতে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। তবে প্রতি হেক্টরে দাম পাচ্ছেন ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
পাটিয়াডাংগী বাজারে আলু বিক্রি করতে আসা চাষীরা বলেন, গতকাল যে আলু প্রতি মণ ছিল ৪৫০ টাকা তা আজ বাজারে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোমানা (লাল) আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা মণ। আর খুচরা প্রতি কেজি ১০ টাকা। গ্রেনোলা আলু প্রতি মণ ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দিন দিন আলুর দাম হুর হুর করে কমে যাচ্ছে।
রুহিয়া বাজারে আলু বিক্রি করতে আসা চাষী তপন চন্দ্র কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, কিছু লাভের আশায় ঘরে ধান বিক্রি করে আগাম জাতের আলু চাষ করেছি। গত বছর যে আলু মাঠেই কেজি বিক্রি করেছিলেন ২০-২৫ টাকায়। এবার সেই আলু একই সময় বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪- ৫ টাকায়। যা এক কেজি আলু বিক্রি করেও মিলছেনা ১কাপ চা! স্বপ্ন যেনো আমার গুড়ে বালি!
আখানাগর ইউনিয়নের আব্দুল কাদের ও মোহাম্মদ আলী সহ স্থানীয় আলুচাষিরা বলেন, চলতি মৌসুমে ৩৩শতাংশ জমিতে গ্রানোলা আলুর ফলন হচ্ছে ৫৮-৬০ মণ। আর আলু চাষে জমিতে খরচ দাঁড়িয়েছে ১৮-২০ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি করলে ১৩-১৪হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা সম্ভব নয়। এতে আমাদের কয়েক হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবুও মিলছেনা পাইকারি ক্রেতা। এসময় চাষিরা সরকারিভাবে বিদেশে রফতানি ও আলুর দাম নির্ধারণ করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
আলুর পাইকারি ক্রেতা ইসলাম ও সুমন বলেন,আবহাওয়া ভালো থাকায় আগাম জাতের চাষকৃত আলু বাজারে
প্রতিদিন আমদানি বাড়ছে। এতে বাজার এক দিন আগে যা ছিল পরের দিন তা থাকছে না। ঢাকা,রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামের চাহিদা মাফিক আমরা বিভিন্ন জাতের আলু ক্রয় করছি।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ চন্দ্র রায় জানান, চলতি মৌসুমে আলু চাষাবাদ ভালো হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া আলুর ব্লাইট রোগ দমনে আমাদের পক্ষ থেকে চাষীদের ম্যানকোজেব+মেটালেক্সিল গ্রুপের কীটনাশক সাজেশন প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে যেহেতু আলুর বাজার দর একটু কম। তাই আমরা চাষিদের কিছু দিন পরে অর্থাৎ আলুর বয়স ৯০দিন পরে বাজারজাত করার পরামর্শ প্রদান করছি।