বুধবার , ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবৈধ ইট ভাটায় নষ্ট সরকারি আম বাগান, নিঃস্ব হচ্ছে কয়েক হাজার কৃষক ! ”কাঠ দিয়ে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে ইট পোড়ানোর কাজ”

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
নভেম্বর ২৫, ২০২০ ৯:৪২ অপরাহ্ণ

আনোয়ার হোসেন আকাশ রাণীশংকৈল থেকে…

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একটি নয়, দুটি ইট ভাটা পরিচালনা করে যাচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইট ভাটার মালিক দানেশ আলী। এদিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র বিহীন কৃষি জমিতে অবৈধ ভাবে সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা স্থাপনের ফলে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকায় আমবাগান চাষী ও প্রায় দুই হাজারের বেশি কৃষক।

শুধু তাই নয় ইট ভাটার কারণে ধ্বংসের পথে খোদ সরকারি দুটি বড় আমবাগান। প্রতি বছর ওই বাগান দুটি থেকে লাখ টাকার বেশি সরকারি রাজস্ব আদায় হলেও ইট ভাটা দুটো স্থাপনের পর থেকে আমের ফলন না হওয়ায় পুরো রাজস্ব আয় বন্ধ হয়েছে সরকারের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের আলোকছিপি, বিশ্রামপুর, রায়পুর ও ছোট পলাশবাড়ী মৌজার কৃষি আবাদি জমিতে মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইট ভাটা স্থাপন করেন কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই। অথচ সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ইট ভাটা স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯) অনুযায়ী অনুমোদন নিতে হবে।

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরে স্থানীয় কৃষক ও আমবাগান মালিকদের বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত করতে আসেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ। পরে গত ১০ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলমের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

একই মাসের ১৬ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলমের স্বাক্ষরিত আরেকটি পত্রে বলা হয়, বিভাগীয় কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ইট ভাটার পার্শ্বে বিশ্রামপুর উত্তর পাড়া দাখিল মাদ্রাসা থাকার অবস্থান উল্লেখ করে নিয়ম অনুযায়ী ইট ভাটা স্থাপন করা হয়নি মর্মে দ্রুত ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়।

তবে পরিবেশন অধিদপ্তরের দেওয়া এসব পত্রের তোয়াক্কা করেনি ঠাকুরগাঁও প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ভাটার মালিক দানেশ আলী। নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনাকালেও ইট ভাটায় পুড়িয়েছেন ইট। চলতি বছরও পুরোদমে চলছে ইট পোড়ানোর প্রস্ততির কাজ। ভাটার চারপাশে স্তপ করা হয়েছে কয়েকশত মণ কাঠের।

এদিকে ওই ইট ভাটায় ধোঁয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমিতে হওয়া ফসল। প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ভাটার পার্শ্বে তীলে তীলে গড়া আমবাগানের মালিকগুলো। নিরুপায় হয়ে প্রায় তিন একর জমির আমবাগান কেটে ফেলেছেন এক আমবাগান মালিক। আম নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এখন অন্য বাগানের গাছগুলোও কেটে নিচ্ছেন বাগান মালিকগণ।

কৃষক ও আমবাগান চাষীরা জানান, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন প্রতিকার না পেয়ে আম গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাগানগুলো কেটে ফেলা হলে বাগানের কাজে নিয়োজিত প্রায় শতাধিক পরিবার কর্মবঞ্চিত হবে বলেও জানান তারা।

আলোকছিপি গ্রামের সমির উদ্দীন জানান, ‘ছুয়ালাক আম খিলাবার তানে এরা আমের বাগান লাইগ্নু, দানেশের ভাটারা সব শেষ করে দিজে, এলা আমও ধরে না, ছুয়ালা খাবাও পারেনা, এই তানে রাগ করে গাছলা কাটে ফিলাচু।

গত ২২ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার আম বাগান মালিক রেজওয়ানুল কবির।
তিনি বলেন, আমি পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। তারা ইট ভাটাটি বন্ধের জন্য দুটি নির্দেশনা জেলা প্রশাসনকে দিয়েছেন। আমি জেলা প্রশাসকের সাথে সরাসরি দেখা করেছি। তিনি এ বিষয়ে কোন সদুত্তোর দেননি। মোট কথা প্রশাসন আইন অনুযায়ী চলছে না, তারা চলছে তাদের খেয়াল খুশিমত।

“এভাবে চলতে থাকলে আমরা যারা পড়ালেখা শেষ করে যারা বৈধ ভাবে কিছু করার চেষ্টা করছি, যেখানে মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে, সেখানে প্রশাসনের কোন সহযোগিতা নেই। অথচ ভাটার মালিক দানেশের কোন বৈধ আয় নেই। তিনি দুটি ভাটা দিব্যি পরিচালনা করছেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। টাকার জোরে সবকিছু এখন চলে। আমাদের এখন এলাকা ছেড়ে যাওয়া ছাড়া কোন রাস্তা নেই। ”

ভানোর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক অপূর্ব রায় জানান, চারটি মৌজার প্রায় দুই হাজারের বেশি কৃষকের ফসল নষ্ট করছে ওই ইট ভাটা। শুনেছি ভাটাটির অনুমোদন নেই। তবুও বন্ধ হচ্ছে না কেন? আমাদের সবার দাবি, ভাটাটি দ্রæত বন্ধ করে আমাদের কৃষকদের ফসল রক্ষার।

ভাটার পার্শ্বে আব্দুর রহিমের বাড়ী। তিনি বলেন, এখানে ভাটার কার্যক্রম চলছে। আমরা কীভাবে বসবাস করব? আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।

আনিসুর রহমান জানান, ভাটার পার্শ্বে দুই একর জমিতে তাঁর আম বাগান রয়েছে। এখানে ইটভাটার কারণে ফলন প্রায় শেষের দিকে। আমাদের না খেয়ে মরে যেতে হবে।

ভানোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব সরকার বলেন, আমার কাছে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গেছে। ইট ভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই জানার পর তা ফেরত চেয়েছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোদ চন্দ্র রায় বলেন, ইট ভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, আমের ব্লাক টিপ রোগ, ধোয়ার কারণে আমের পাতা খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা হারায়, আম ছোট আকারেরসহ নানা ক্ষতির সম্মুখিন হয়। চাষীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইট ভাটা কৃষি আবাদি জমিতে স্থাপন করার ফলে কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা নিরুপনের জন্য সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলমান। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন হাতে পাবো। হাতে পেলেই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সেটি পাঠাবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন জানান, যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কোন ইট ভাটা চলে, যদি পরিবেশ অধিদপ্তর ওই ভাটা বন্ধের জন্য আমাদের সহযোগিতা চাই, তাহলে আমরা সকল ধরণের সহযোগিতা কর

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

আশ্রয়ণের বাড়ী আছে তবে চলাচলের রাস্তা নেই,দূর্ভোগে বাসিন্দারা

বিসিবি একাডেমি কাপ ঠাকুরগাঁওয়ে ইয়াং টাইগারর্স ক্রিকেট একাডেমি জয়ী

বিসিবি একাডেমি কাপ ঠাকুরগাঁওয়ে ইয়াং টাইগারর্স ক্রিকেট একাডেমি জয়ী

ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা

দিনাজপুরে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন সিভিল সার্জন’র

ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদ স্মরণে ফলদ গাছের চারা বিতরন

পীরগঞ্জে এক পত্রিকা বিক্রয়কর্মীকে বাইসাইকেল উপহার

আটোয়ারীতে পদ্মা সতেুর উদ্বোধন উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা

দিনাজপুর ফল ব্যবসাযী সমবায় সমিতির নির্বাচনে মঈন সভাপতি ও নাসিম খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত

হরিপুরে আইন শৃঙ্খলা সভা ও ইফতার মাহফিল

দিনাজপুরে আইডিইবি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বর্নাঢ্য র‌্যালী