ঠাকুরগাঁও: ফেসবুককে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে স্বল্প পুুঁজিতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন নারীরা। এখন দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। এর মধ্যে ১২ হাজার পেজ চালাচ্ছেন নারীরা। সেই হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়েও কম নয়। ক্ষুদ্র পরিসরে ২শতাধিক নারীরা ঘরে বসে থেকে নেমেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। এখানে নারী উদ্যোক্তাদের কেউ পোশাক, কেউ গয়না, কেউ হাতে পাটের তৈরি জিনিস, কেউ তৈরি খাবারসহ নানা পণ্য বিক্রি করছেন। অনেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার কাজ করছেন। কেউ শৌখিন পণ্যকে নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন। এই নারীরা শিক্ষিত। শুধু নারীরাই নয়, এখানে যোগ হয়েছেন অনেক শিক্ষিত যুবকও।
এমনই নারী-পুরুষ উদ্যোক্তাদের এক মিলন মেলা হলো ঠাকুরগাঁওয়ে। শুক্রবার শহরের হাজীপাড়াস্থ লারোজা রেস্টুরেন্টে এই নারী উদ্যোক্তাদের মেলার আয়োজন করে লাভলী বিউটি পার্লার এন্ড লেডিস ট্রেইলার্স।
সেখানে কথা হয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কলেজ ছাত্রী দোলার সাথে। তিনি বলেন, নিজের একটা আলাদা পরিচয় থাকতে হবে। কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই। তাই এই অনলাইন বিজনেসে আসা। দেলা আরো বলেন, করোনার সময় অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেনি। এই সময়ে নারীরা ঘরে বসে না থেকে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পন্য বিক্রি করেছে। বেড়ে উদ্যোক্তা।
তার মতো গয়না বিক্রেতা রোজি আক্তার বলেন, শারীরিক অসুস্থতায় স্বামী ঘরে বসা। তাই নিজে কিছু করতে চাই। পরিবারে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করছি। এ ব্যবসা লাভজনক বলে জানান তিনি।
তার মতোই সাশ্রয়ী মেলার ফারিহা ওয়াদুদ বলেন, নারী উদ্যোক্তায় প্রধান বাঁধা অর্থ ও পরিবারের মানসিকতা। ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হলে টাকার প্রয়োজন হয়। প্রথমে অল্প টাকা দিয়ে শুরু করতে হয়েছে। এজন্য বাবা-মা ও স্বামীর যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
অনলাইন এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, তারা ফুল, শোপিচ, বøাউজ, বোরখা, শাড়ি ৪৯ টাকা থেকে ৪৯৯ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। এছাড়াও ভোক্তাদের চাহিদা অনুয়ায়ী এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি করতে হয়।
কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, অল্প কিছু নিজের জমানো টাকা দিয়ে মেয়েদের পোশাক কিনে ফেসবুক পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করি। প্রথম দিকে কেউই তেমন সাহস দেয়নি। অনেক ধৈর্য ধরেছি, পরিশ্রম করেছি, নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। ধীরে ধীরে সফলতার মুখ দেখতে পাই। অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করা খুব চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। এই প্রফেশন এতটা সহজ নয়। অনলাইনের বিজনেসের প্রথম শর্তই হলো ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হওয়া, পণ্যের মান, সঠিক মূল্য উপস্থাপন করা এবং নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়া। সব ক্ষেত্রে আমি আমার ক্রেতাদের পছন্দকেই গুরুত্ব দেই। হোম ডেলিভারি দেই, যাতে ক্রেতারা পণ্য যাচাই বাছাই করে নিতে পারে। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তো মোকাবেলা করতে হয়। যেমন ক্রেতা অর্ডার করে আর ফোন ধরে না। অর্ডার ডেলিভারির পর ক্যানসেল করে। অনেকে ফেক আইডি দিয়ে অর্ডার করে সেটাতে প্রডাক্ট রিসিভ করে না। তবুও বাধা বিপত্তি তো আসবে, ঝুঁকি নেয়াই একজন ব্যবসায়ীর বৈশিষ্ট্য, থেমে থাকা যাবে না সফলতা আসবেই। এভাবে সফল হওয়ার চেষ্টা আমি নিজেই করছি। নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করে নিজের সুপ্ত মেধাকে কাজে লাগিয়েছি। তারা আরো বলেন, যদিও আরো অনেকদূর যেতে হবে। স্বপ্ন দেখি একটি বুটিক শপ দেবো। জীবনে বাধাবিপত্তি তো থাকবেই। বাধা জয় করেই তো সফলতা পাবো, তখন পথের বাধাগুলোকে দূর অতীত মনে হবে। নিজের ব্যবসাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেন সবাই দেখে বলে মেয়েরাও কোনো ছেলে থেকে কম নয়।
নারী উদ্যোক্তাদের মিলন মেলা উপলক্ষে হাজীপাড়াস্থ লারোজা রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হয় নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠাদের গল্পবলা, তাদের সমস্যা-সম্ভাবনা বিষয়ক আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সহকারি প্রফেসর নাসরিন জাহান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন-লাভলী বিউটি পার্লারের উদ্যেক্তা মোসা.লাভলী আক্তার, ইত্তাশাম উল হক মিম, তানজিলা উর্মিসহ অনেকে। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ফারিহা ওয়াদুদ।
পরে সফল তিন নারী উদ্যোক্তাকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। তারা হলেন, সুইট গিফটের তামান্না মিমি, আস্থা কালেকশনের উম্মে কুলসুম রানি এবং প্রিয়াংকা দাস।