বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিচয় দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অভিনব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক মুক্তিযোদ্ধার নিকট হতে ৬২ হাজার ২ দুইশত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল -২০২২) দুপুরে বীরগঞ্জ থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছে প্রতারিত মুক্তিযোদ্ধা।
এ ব্যাপারে সুজালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কর্মরত গ্রাম্য পুলিশ মদন মোহন জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুমানিক ৬টা ১৫ মিনিটে ০১৮৭২৮৪৮৩৯৮ মোবাইল নম্বর হতে আমার ০১৭৬২৮১৯৯৬৬ নম্বর মোবাইলে ফোন আসে। ফোনে নিজেকে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের এই ফোন নম্বরেই জরুরী ভিত্তিত্বে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। বিষয়টি এখনই জানিয়ে দেন। ওঁর নিদের্শনা মোতাবেক আমার এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল আজিজকে না পেয়ে বিষয়টি তার ছেলেকে বিষয়টি অবহিত করে ইউএনও পরিচয়দানকারী ব্যক্তির মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানাই। পরে রাতে বীরমুক্তি মোঃ আবদুল আজিজ জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিচয় দানকারী ব্যক্তিটি অনুদান প্রদানের কথা বলে ওঁর কাছে টাকা চেয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল আজিজ জানান, মোবাইল ফোনে আমার ছেলের কাছে বিষয়টি অবহিত হয়ে নম্বরটিতে ফোন দেই। ফোনে তিনি নিজেকে বীরগঞ্জ উপজেলার নতুন ইউএনও পরিচয় দিয়ে জানান, ১২জন মুক্তিযোদ্ধার নামে জন প্রতি ২ লক্ষ ৯৫ টাকা এককালীন অনুদান এসেছে। তবে প্রত্যেক জনের নামে একাউন্টে সাড়ে ৬২হাজার টাকা জমা দেখাতে হবে। এই টাকাটা কি আপনি দিতে পারবেন। আমি বিষয়টি শোনার পর এই মুহুর্তে আমার এত টাকা নেই জানিয়ে দেই। প্রতি উত্তরে আজকে আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি বিষয়টি স্মরণ করে দেন। আমি অবাক হয়ে বলি সেই টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে ফোনটি কেটে দেই। বিষয়টি আমার সন্দেহ হলে আমি তাৎক্ষণিক ভাবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক কালিপদ রায়কে অবহিত করি।
একই কথা জানিয়ে সুজালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত জয়নন্দ রায়ের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিচয় দিয়ে অনুদানের বিষয়টি বলার পর কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি ০১৮৬২৪৪৫৮৮৪এই নম্বর হতে আমাকে ফোন দিয়ে নিজেকে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। পরে তিনি বলেন আপনি টাকা পাঠাতে চাইলে কষ্ট করে ব্যাংকে আসার দরকার নাই। আমার মোবাইল ব্যাংকিং চালু আছে আমার এই নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেন আপনার নামে ইউএনও বরাবরে জমা হয়ে যাবে। আমি ওঁর কথা মতো টাকা পাঠিয়ে দিয়ে ফোন করে অবহিত করতে গেলে ফোন বন্ধ পাই। পরে রাতে উপজেলা পরিষদে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করি। ওঁর পরামর্শে বীরগঞ্জ থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ দিয়েছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক কালিপদ রায় জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট হতে এ ধরণের অভিযোগ পাওয়ার পর আমি তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে মোবাইল করি। পাশাপাশি এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং বীরগঞ্জ থানার ওসিকে অনুরোধ করি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে ওঁরা আশ্বস্ত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের জানান, এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র দেশে সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে তাদের নানা প্রতারিত করে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশের কোন বড় উৎসবকে ঘিরে এই চক্রটির অপতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপরে প্রশাসন সজাক রয়েছে। প্রতারক চক্রের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক জন্য আমরা বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা শুরু করেছি। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মীসহ সমাজের সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।