শনিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধুর নজরুল

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০ ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম- বয়সে বঙ্গবন্ধু নজরুলের চেয়ে একুশ বছরের ছোট ছিলেন। বয়সের এই ব্যবধান সত্ত্বেও দুই বাঙালির চিন্তায় ছিল বাঙালির স্বাধীনতা এবং সর্বস্তরের মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার মিল। যে কারণে বলা চলে, কাজী নজরুল ইসলাম যা চিন্তা করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু সে চিন্তার ধারাবাহিকতা এনেছেন আর বাঙালিকে যথাযোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে-সূত্রেই বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক সংবিধান। বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন আদর্শিক ধ্রুব তারার মতো।

কাজী নজরুলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কবে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল, এ ব্যাপারে কোনো প্রামাণিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুরে প্রথম যান ১৯২৫ সালের ১ মে। এরপর ১৯২৬, ১৯৩৬, ১৯৩৮ সালে নজরুল ফরিদপুরে গিয়েছেন। এর কারণ ছিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আবার রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রদের নজরুল-সংবর্ধনায় যোগদান। শেখ মুজিবুর রহমান এ সময় রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে যোগদান করেননি। ১৯৪০ সালে বঙ্গবন্ধু নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন। এ কারণে নজরুলের এ সব সভায় কিশোর শেখ মুজিবের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা কম। তবে তাঁর বাড়িতে যেহেতু ‘সওগাত’, ‘মোহাম্মদী’, ‘আজাদ’ পত্রিকা রাখা হতো সেহেতু কাজী নজরুল ইসলামের রচনা ও তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য ও পরিচয় কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু পেয়ে থাকবেন। ১৯৪১ সালের কোনো একদিন কাজী নজরুলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে। সে সাক্ষাৎটি হয়েছিল ফরিদপুরে; ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে। ঐ সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, ইব্রাহিম খাঁর মতো সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। সরকারের ১৪৪ ধারা জারির কারণে প্রকাশ্যসভা হতে পারেনি। কিন্তু ঘরোয়া সভায় কাজী নজরুল ইসলাম গান শুনিয়েছিলেন; শিক্ষা ও ছাত্রদের কর্তব্য সম্পর্কে বক্তব্যও দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন: ‘একটা ঘটনার দিন-তারিখ আমার মনে নাই, ১৯৪১ সালের মধ্যে হবে, ফরিদপুর ছাত্রলীগের জেলা কনফারেন্স, শিক্ষাবিদের আমন্ত্রণ জানান হয়েছে। তাঁরা হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, ইব্রাহিম খাঁ সাহেব। সে সভা আমাদের করতে দিল না, ১৪৪ ধারা জারি করল। কনফারেন্স করলাম হুমায়ুন কবির সাহেবের বাড়িতে। কাজী নজরুল ইসলাম সাহেব গান শোনালেন। আমরা বললাম, এই কনফারেন্সে রাজনীতি আলোচনা হবে না। শিক্ষা ও ছাত্রদের কর্তব্য সম্বন্ধে বক্তৃতা হবে।’কাজী নজরুলের সেই বক্তৃতা ও গানে অন্যদের মতো বঙ্গবন্ধুও ছাত্রাবস্থায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নিশ্চয়। তা না হলে এই স্মৃতি তাঁর আত্মজীবনীতে ঠাঁই পাবে কেন? নজরুল এর আগেই পূর্ব বাংলার তরুণদের কাছে আদর্শ ও কর্মনিষ্ঠতার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। যে কারণে তিনি আমন্ত্রিত হয়ে বারবার পূর্ব বাংলায় এসেছেন। ১৯১৪ সালে, পনেরো বছর বয়সে তিনি প্রথম পূর্ব বাংলায় এসেছিলেন এবং সেটি ময়মনসিংহের দরিরামপুরে। এরপর তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, ফরিদপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ আরো কিছু জায়গায় একাধিকবার এসেছেন। এসব জায়গায় তিনি লিখিত ও তাৎক্ষণিক অনেক বক্তৃতা দিয়েছেন এবং যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এই বক্তৃতার অনেকগুলোই এখন পাওয়া যায় না, সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু পাওয়া যায়। ১৯২৯ সালে নজরুল চট্টগ্রামের বুলবুল সোসাইটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ভয়ে-নির্ভীক, আনন্দে-শান্ত তারুণ্যই তিনি কামনা করেন।’

একই বছর চট্টগ্রাম এডুকেশন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে অভিভাষণে তিনি বলেন, ‘ভারত যে আজ পরাধীন এবং আজো যে স্বাধীনতার পথে তার যাত্রা শুরু হয়নি- শুধু আয়োজনেরই ঘটা হচ্ছে এবং ঘটও ভাঙছে- তার একমাত্র কারণ আমাদের হিন্দু-মুসলমানের পরস্পরের প্রতি হিংসা ও অশ্রদ্ধা। আমরা মুসলমানেরা আমাদেরই প্রতিবেশী হিন্দুর উন্নতি দেখে হিংসা করি, আর হিন্দুরা আমাদের অবনত দেখে আমাদের অশ্রদ্ধা করে।’

১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জে বঙ্গীয় মুসলিম তরুণ সম্মেলনে নজরুল বলেছিলেন, ‘ধর্মের পরিচয়ে নয়, কর্মের পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যৌবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’ ১৯৩৩ সালে ফরিদপুর মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে বলেন, ‘শত বিধি-নিষেধের অনাচারের শিকলে বন্দিনী এই পৃথিবী মুক্তির আশায় ফরিয়াদ করছে যুবকদের প্রাণের দরবারে। মুক্তিকামী পৃথিবীর সেই আর্জি কি বিফল হবে?’

এভাবেই প্রতি বক্তৃতায় যৌবশক্তিকে, বিশেষ করে মুসলিম যুবসমাজকে কাজী নজরুল ইসলাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গে আহ্বান জানিয়েছেন। পূর্ব বাংলা ছাড়াও, কলকাতা বা পশ্চিম বাংলার নানা সভাতে নজরুল ইসলাম যে বক্তৃতা দিতেন তা তরুণদের কাছে ছিল আকর্ষণীয়। দুর্ভাগ্য, কাজী নজরুলের সঙ্গে একই সভায় পরিণত শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণ সম্ভবপর হয়নি। কারণ, ১৯৪২ সালের মাঝামাঝি গোপালগঞ্জ থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতার ওয়েলেসলি পাড়ার ‘ইসলামিয়া কলেজে’ যুবক শেখ মুজিবুর রহমান যখন ভর্তি হন, তার কিছু দিনের মধ্যেই অর্থাৎ ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে নজরুল দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। নজরুল যদি সে সময় ব্যাধিগ্রস্ত না হয়ে পড়তেন, তাহলে নজরুল ও শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও পরিচয়ের একটি চমৎকার যুগলবন্দি হয়তো বাঙালির সামনে ইতিহাস হয়ে থাকতো। তারপরও বলতে হয়, নজরুলের সৃষ্টি, কর্ম ও আদর্শ শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথম থেকেই অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই নজরুলের কবিতা ছিল বঙ্গবন্ধুর মুখস্থ।

১৯৫৩ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু করেছেন, যেখানে তিনি নজরুলের একাধিক কবিতা মুখস্থ বলেছেন বলে জানা যায়। হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির সঙ্গে করাচিমুখো যাত্রাকালে মোটরগাড়িতে কয়েকজন পাকিস্তানি আইনজীবীকে বঙ্গবন্ধু নজরুলের ‘চোর-ডাকাত’, ‘নারী’, ‘সাম্য’ কবিতা মুখস্থ শুনিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আমার কাছে তাঁরা [পাকিস্তানি আইনজীবীরা] নজরুল ইসলামের কবিতা শুনতে চাইলেন। আমি তাঁদের ‘কে বলে তোমায় ডাকাত বন্ধু’, ‘নারী’, ‘সাম্য’- আরও কয়েকটা কবিতার কিছু কিছু অংশ শুনালাম।’

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

বীরগঞ্জে বিদ্যালয়ের মাঠে পাথর-বালির স্তুপ রাখায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খেলা-ধুলা থেকে বঞ্চিত

আমরা করব জয়’র উদ্যোগে শিশুদের নিয়ে শিশু দিবস পালন

বীরগঞ্জে আদিবাসীর জমি জবর দখল করায় মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

পীরগঞ্জে যুবদের উন্নয়নে নীতিমালা চূড়ান্তকরণ কর্মশালা

বীরগঞ্জে পচা-বাসী ও অস্বাস্থ্যকর খাবার রাখায় মুকবুল হোটেলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

জলঢাকায় ৪শ বোতল ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার ২

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পীরগেঞ্জে আওয়মীলীগ ৭, সতন্ত্র ৩

করোনায় আক্রান্ত যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নিখিল

রাণীশংকৈলে ইএসডিও-এডুকো প্রকল্পের মুক্ত আলোচনা ও পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

ঠাকুরগাঁওয়ে দুইটিতে নৌকা একটিতে লাঙ্গল