গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’ দেখতে উপচেপড়া ভীড় লক্ষণীয়। মনোমুগ্ধকর ‘পাতা খেলা’ দেখতে হাজারো দর্শকের করতালি উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে উপভোগ করলো দুর-দুরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।
শুক্রবার বিকালে থেকে সন্ধা পর্যন্ত দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোবিন্দপুর চিমনিভাটা এলাকায় হোসেনপুর যুব সংঘ ক্লাব এ পাতা খেলার আয়োজন করে।
খেলাটিতে লক্ষনীয় ছিল শত শত নারী পুরুষ ও শিশু দর্শকের উপচে পড়া ভীড়। পড়ন্ত বিকালে তাপদাহ উপেক্ষা করে তান্ত্রিক ও দর্শকেরা মাঠের চারিদিকে পরিপূর্ন হয়ে উঠে।
এরপর মাঠের চার কোনে সহযোগী তান্ত্রিকদের সাথে নিয়ে আসন গেড়ে বসেন । এর আগে মাঠের মাঝ খানে খেলা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে খেলার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মাঠের মাঝখানে ঘোঠ বা একটি কলাগাছ বসানো হয়। একটি কুচু পাতার উপরে দুধ রেখে কলা গাছে উপরে ছেড়ে দেয়া হয় ৫টি বিষধর সাপ। এরপর তান্ত্রিকেরা বিভিন্ন নিরগুন বা তন্ত্র-মন্ত্রের বলে সাপকে তাদের কাছে টানতে থাকেন।
মনোমুগ্ধকর খেলায় খানসামার জমিদারনগরের সাদেকুল ইসলাম চ্যাম্পিয়ন হয় এবং তুলশীপুরের আজাদ রানার্সআপ হয়। উভয় দলকে উপহার হিসেবে দুটি ছাগল প্রদান করা হয়।
হোসেনপুর গ্রামের খানসামা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ওবায়দুর রহমান সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য শরিফুল ইসলাম প্রধান। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান জুয়েল ও ইউপি সদস্য আফসেদুর রহমান প্রমুখ।
আয়োজকরা জানান, তন্ত্র-মন্ত্রের এ পাতা বা সাপ খেলাটি আদিবাংলার একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি। আধুনিক যুগেও আদিবাসী তুড়ী সম্প্রদায়ের মানুষেরা ঐতিহ্যগতভাবে খেলাটি ধরে আছে। খেলা দেখতে আসা নতুন প্রজন্মের অনেকে জানিয়েছে তাদের অভিব্যাক্তি। বিনোদন ও দর্শক প্রিয় এ খেলাটি কালের আবর্তনে যেন হারিয়ে না যায় এমন প্রত্যাশা দর্শক ও আয়োজকদের।
উল্লেখ্য, আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে তুমড়ি বা পাতা খেলা। সনাতন হিন্দু ধর্মের পদ্মাদেবী তথা মনসা দেবীর অলৌকিক লীলা থেকে কালের বির্বতনে এ পাতা খেলার উৎপত্তি। মনসা দেবীর অলৌলিক লীলা সনাতন ধর্ম থেকে বাঙালীর সংস্কৃতিতে স্থান করে নিয়েছে। প্রতি বছরের শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের তিথি সংক্রান্তীতে সনাতন হিন্দু-ধর্মাবলম্বীরা পদ্মাদেবীর তুষ্টীর জন্য মনসা পূজা করে থাকে। মনসা পুজার পরের দিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রবাণের তুমড়ি খেলা অনুষ্ঠিত হয়।