পঞ্চগড় \ শীতকাল আসতে আরও প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও হেমন্তের শুরু থেকেই শীত চলে এসেছে উত্তরের শীতের জেলা পঞ্চগড়ে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও প্রতিদিনই নামছে রাতের তাপমাত্রা। গত ১০ দিন ধরে টানা দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে তেঁতুলিয়ায়। গতকাল শনিবার তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসূমে দেশের সর্বনিন্ম ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এর আগে শুক্রবার ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার ১৮ দশমিক ৫, বুধবার ১৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার ১৯ দশমিক ৫, সোমবার ২০ দশমিক ৯, রোববার ২১ দশমিক ১, শনিবার ২১ দশমিক ১, শুক্রবার ২১ দশমিক ৫ এবং বৃহস্পতিবার ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। যা দেশের মধ্যে ছিল সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস বলছে, বঙ্গপসাগরে নি¤œচাপের কারণে ঝড়-বৃষ্টির পর বিদায় নেবে বর্ষার বৃষ্টি। এরপর থেকে আসল রূপে ফিরবে শীত।
হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থান দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। তাই দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে পঞ্চগড়েই শীত শুরু হয় আগে এবং শেষও হয় সবার পড়ে। এবার এর ব্যাত্যয় ঘটেনি। শরতের শেষে এসে মাঝারী কুয়াশা জানান দেয় শীত আসছে। সেই সাথে নামতে শুরু করে ব্যারোমিটারের পারদ। নামতে শুরু করে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। যদিও দিনে প্রচন্ড রোদের কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন রয়েছে প্রায় অপরিবর্তিত। গতকাল শনিবার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও শুক্রবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ সম্পূর্ণ মেঘমুক্ত থাকায় গতকাল শনিবারও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছিল প্রখর রোদ। তবে সন্ধ্যার আগে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে শীতল বাতাস বইতে শুরু করলে শুরু হয় শীতের আমেজ। আর রাত বাড়ার সাথে সাথে হালকা থেকে মাঝারী কুয়াশার সাথে শীতল বাতাসে কাহিল হতে থাকে মানুষজন।
এখন দিনের বেলা তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে এসি-ফ্যান চালালেও সন্ধ্যার পর থেকেই এগুলোর সুইচ অফ রাখতে হচ্ছে। শুরু হয়েছে শীতের পুরো প্রস্তুতি। শীতের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে শীতের সম্বল লেপ তোষক তৈরী শুরু করে দিয়েছেন উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা। জেলা শহরের লেপহাটি হিসেবে পরিচিত কদমতলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লেপ তৈরীর কারিগররা। একেকটি দোকান প্রতিদিন ২৫-৩০টি করে লেপ সেলাই করছেন। জেলা শহরের কদমতলা রোডের তুলা ব্যবসায়ী কেরামত আলী জানান, তুলা ও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার লেপের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তার পর উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন আগেভাগেই লেপ সেলাই করছেন। কেউবা আবার পুরোনো লেপ নতুন করে সেলাই করে নিচ্ছেন। তবে শীতের প্রস্তুতি নেই খেটে খাওয়া ও ছ্ন্নিমূল মানুষদের। হাতে কাজ কম ও দ্রব্যমূল্যে উর্দ্ধগতির কারণে সংসার সামলানোটাই তাদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শীত নিয়ে শংকায় রয়েছেন তারা। লেপ তৈরী করার মতো তাদের কোন সামর্থ নেই। তাই শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে চট বা ছেড়া কাপড় দিয়ে পুরনো কাথা মেরামত করার চেষ্টা করছেন তারা। প্রচন্ড শীতে কাহিল মানুষদের জন্য প্রতিবছর সরকারীভাবে শীতবস্ত্র বিরতণ করা হয়। কিন্তু এগুলোর পরিমাণ এতই নগন্য যে একটি গ্রামের মাত্র দুই একজন এর সুযোগ পায়। বেসরকারী উদ্যোগে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও শহরের আশপাশেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন এই সকল শীতবস্ত্রের দেখাই পায়না।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত ১০ দিন ধরে টানা দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা আমরা রেকর্ড করছি। গতকাল শনিবার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নামতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমামী কয়েকদিনের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এটি কেটে গেলেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে এবং আসল শীত শুরু হবে।