পঞ্চগড় \ সূর্যের আলো ফোটার পর থেকে পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে মহানন্দায় নামছে শ্রমিকের দল। উত্তর-দক্ষিণ আর পূর্ব-পশ্চিমে কি দেখা যায় এতে তাদের কোন ভ্রæক্ষেপ নেই। নদী পাড়ের জমিতে লাগানো আমন ধান পেকে ধারণ করেছে সোনালী রঙ। পাশের ফাঁকা জমিতে গরু-ছাগলকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য নিয়ে এসেছে গৃহিনীরা। তার উপরে গাছের ফাঁকে নীল আকাশের নীচে ডানা মেলেছে শুভ্র-সোনালী কাঞ্চনজঙ্ঘা। গত শনিবারের পর গতকাল বুধবারও সূর্যোদয়ের পর থেকে মেঘ ও কুয়াশামুক্ত উত্তারাকাশে দৃশ্যমান হয় হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে থাকা সুউচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভোররাত থেকে তেঁতুলিয়ায় অবস্থারত পর্যটকরা সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ার সাথে সাথে স্মার্ট ফোনে কেউ ছবি তুলে আবার কেউবা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে। আশপাশের জেলাগুলোতে থেকে যারা কয়েক দিন ধরে তেঁতুলিয়া এসে ঘুরে যাচ্ছিল তারা খবর পাওয়ার সাথে সাথে যে যেভাবে পেরেছে রওয়ানা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। সকাল ১০টার মধ্যে পর্যটকহাটিতে পরিনত হয় তেঁতুলিয়া। অনেকে আবার পঞ্চগড় জেলা শহরের আশপাশ থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন করে ফিরে যায়। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর চলতি মৌসূমে তৃতীয় বারের মত কিছু সময়ের জন্য দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। তবে আকাশে মেঘ আর সকালে কুয়াশা থাকায় পরিস্কারভাবে দেখা যায়নি। এর পর থেকে প্রতিদিনই সকাল সকাল পর্যটকরা ভিড় করে তেঁতুলিয়ায়। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। কুয়াশা আর মেঘে ঢাকা ছিল কাঞ্চনজঙঘা। চলতি মৌসূমের মধ্যে গতকাল শনিবারই পরিস্কারভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন করতে পেরেছে পর্যটকরা।
কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালায় ২য় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮,১৬৯ ফুট বা ৮,৫৮৬ মিটার। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের প‚র্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে এবং নদীগুলো বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে রয়েছে নানা রকমের লোককাহিনী। এর আশে পাশের অঞ্চলটিকে বলা হয় পর্বত দেবতার বাসস্থান। দেবতার নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা ডেমন। এটি এক প্রকার রাক্ষস। অনেকে বিশ্বাস করে অমরত্বের রহস্য লুকানো আছে এই শ্বেত শুভ্র শৃঙ্গের নিচে। মেঘ বৃষ্টি এবং কুয়াশার আড়ালেই হাত বাড়ালেই যেন শ্বেত-শুভ্র হিমালয় ! আর একটু এগুলেই হয়তো ছুঁয়ে ফেলা যাবে, চোখ জুড়ানো মন ভোলানো বরফ ঢাকা পর্বতটাকে। হিমালয় মানেই এক বিষ্ময়কর রহস্য, সৌন্দর্যের সব রং এর মিশ্রনেই অপরুপ কাঞ্চনজঙ্ঘা।
সকালে রংপুর থেকে তেঁতুলিয়ায় পৌছেছেন মুরাদ (৩৫)। সকালে শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা দেশে মুগ্ধ তিনি। জানালেন, এতদিন টিভি আর পত্রিকায় দেখে আসছিলেন তেঁতুলিয়া থেকে পৃথিবীর তৃতীয় সুউচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আজ বিশ্বাষ করলেন নিজ চোখে দেখে। সকালে শুভ্র আর দুপুরে সোনালী কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখতে তিনি আবারও তেঁতুলিয়ায় আসবেন বলে জানালেন। স্বামী সন্তানদের নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার উদ্দেশ্যেই শুক্রবার বিকেলে তেঁতুলিয়া এসেছেন পৃথিলা পারভীন (৪৪)। তেঁতুলিয়াতেই রাতে অবস্থানের পর গতকাল সকালেই তাদের চোখে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। খালি চোখে এত কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে ভাবতেই পারছেনা না তিনি।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, ট্যুরিষ্টদের আনন্দকে আমরাও উপভোগ করছি। তাই তাদের নিরাপত্তা, থাকা, খাওয়ার বিষয়গুলোকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোসহ পর্যটন স্থানগুলোকে দৃষ্টি নন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই আয়োজন চলমান আছে। পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা পিপিএম বলেন, তেঁতুলিয়া ট্যুরিষ্ট পুলিশের মাধ্যমে পর্যটকদের নানা ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। দেশের আর সব জায়গার চেয়ে পঞ্চগড়ের সার্বিক আইন শৃংঙ্খলা অনেক ভাল।