রবিবার , ৩০ অক্টোবর ২০২২ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাথায় লাঞ্ছনা নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে স্বাধীনতার ৫১ বছর যুদ্ধ শিশু স্বীকৃতি পেতে চাই মজিবর রহমান

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
অক্টোবর ৩০, ২০২২ ১:৫৬ অপরাহ্ণ

মশিউর রহমান,বালিয়াডাঙ্গী(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি \ আজও মাথায় লাঞ্ছনা নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে স্বাধীনতার ৫১ বছর, যুদ্ধ শিশু’র স্বীকৃতি পেতে চাই ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর(গোলবস্তি) গ্রামের মজিবর রহমান। ১৯৭২ সালের ২১ সে মার্চ জন্ম মজিবর রহমানের।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল শামস আল বদর বাহিনীর সহযোগীতায় পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয় তমিনা খাতুন। তারই ওরশে জন্ম হয় আজকের যুদ্ধ শিশু মজিবর রহমান।
মজিবর রহমানে সাথে কথা হলে সে জানান, ১৯৭২ সালের ২১ সে মার্চ তারিখে আমার জন্ম হয়। আমার জন্মের পর মায়ের মুখে শুনেছি, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এদেশীও দোসর রাজাকার, আল সামস, আল বদর বাহিনীর লালসায় পাক হানাদার বাহিনী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়, আমার মাতা তমিনা খাতুন। তারপর আমার মা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তারই ফলশ্রæতিতে আমার মা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তারপর শুরু হয় বাবার নানা নির্যাতন। এই কথাগুলি বলতে বলতে মজিবর রহমান অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার বাকরুদ্ধ নয়নে সে আর কথা বলার মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। ২০১৪ সালে তার মা তমিনা খাতুন মৃত্যুবরণ করেন এবং তার কয়েক বছর পুর্বে তিনি রাষ্ট্রিয়ভাবে বীরাঙ্গনা (মুক্তিযুদ্ধার) স্বীকৃতি পান।

লালাপুর(গোলবস্তি) গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে হুসেন আলী (৭০) জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এলাকার রাজাকার, আল সামস আল বদর বাহিনীর কুপরামর্শে পাক বাহিনীদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় মজিবর রহমানের মাতা তমিনা খাতুন তার নিজ বাড়িতে। পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মজিবর রহমানের পিতা তৈয়ব আলী তার স্ত্রী তমিনা খাতুন ধর্ষণের শিকার ও গর্ভবতী হওয়ার কারণে ঘৃণায় বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
তারপর তমিনা খাতুন কিছুদিন প্রতিবেশীদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে অতি কষ্টে দিন যাপন করেন। ঘটনাটি জানার পর এলাকার কিছু মুক্তিযোদ্ধ ও গণ্যমান্য ব্যক্তি তৈয়ব আলীকে বুঝিয়েছেন যে, মহান স্বাধীনতা ও স্বাধীন রাষ্ট্রপেতে দেশের ৩০ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত ও সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। এমন অনেক কথা বলে তাদের সহায়তায় মজিবরের মাতা তমিনা খাতুনকে তার স্বামীর গৃহে এনে পুর্ণবাসন করিয়ে দেন।
এর কিছুদিন পর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে মজিবর রহমানের জন্ম হয়। তার নামকরন; সে সময় হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকার কারণে, তমিনার ছেলেটির নাম রাখা হয় মজিবর রহমান।

উপজেলার লালাপুর(গোলবস্তি) গ্রামের মৃত আজিজুর রহমান আজির ছেলে সহিরুল ইসলাম(৬৮) জানান, দেশ স্বাধীন হয়ে ১৯৭২ সালে মজিবর রহমানের জন্ম হয়। তারপর শুরুহয় যত কথা, এলাকার লোকজন ও তার সমবয়সী ছেলেরা মজিবর রহমানকে জারজ ও পিতৃহীন বলে নানা ভাবে লাঞ্ছনা, ভৎসনা দিয়ে সমাজের আর দশ জন সাধারণ মানুষের মতো করে ভাল চোখে দেখছেনা। এই লাঞ্ছনার বোঝা তাকে এখনো বইতে হয়। এলাকর লোকজন তাকে জারজ হিসেবেই মনে করে।
উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী(ফুলতলা) গ্রামের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আশির উদ্দীনের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী মোহা.আমিরুল ইসলাম জানান, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক মহোদয়ের নিকট প্রার্থনা জানাই, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল শামস, আল বদর বাহিনীর সহযোগীতায় পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয় তমিনা খাতুন। তারই ওরসে জন্ম হয় আজকের যুদ্ধ শিশু মজিবর রহমান ৫১ বছর বয়সেও আজও জারজ ও পিতৃহীন হিসেবে সমাজে নানা ভাবে লাঞ্ছনা ও ভৎসনা নিয়ে চলতে হয়। মজিবর রহমান পেশায় দিনমজুর হলেও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাকে সে বুকে লালণ ও ধারন করে রেখেছে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও