বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সংগ্রামী এক নারী প্রতিকূলতা কাটিয়ে জয়িতা পুরস্কার অর্জন করে সমাজে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবসে বীরগঞ্জ উপজেলায় জয়িতার এক জীবন সংগ্রামের চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই জয়িতাকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা আপন আলোয় উদ্ভাসিত জয়িতা।
অভাব, অনটন ও বঞ্চনার করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসা জয়িতাদের সাফল্যের গল্পগুলো আসলেই প্রশংসনিয়। দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা আজ আপন আলোয় উদ্ভাসিত। পাশাপাশি অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে। তাদেরই একজন মোছাঃ শাহিনা আক্তার। বয়স প্রায় ৩৪ এর কোটায় ।
জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে আজ তিনি গর্বিত । দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ১০নং মোহনপুর ইউনিয়নের মাটিয়াকুড়া গ্রামের শহিনা আক্তার এর জীবন যুদ্ধের কথা। সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখায় “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার সফল জয়িতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। শুক্রবার (৯ডিসেম্বর -২০২২) দুপুরে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের আয়োজনে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে উপজেলা মিলনায়তনে জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রমের অধীনে শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে এ সম্মাননা-সংবর্ধনা প্রধান করা হয়। আর এখানেই সংবর্ধনা নিতে আসা ওই জয়িতা শাহিনা আক্তারের সাথে কথা হয়।
সংবর্ধনা পাওয়ার পর তার সফল হওয়ার গল্প শুনতে চাইলে তিনি আবেগাপ্লুত কষ্টে গাঁথা জীবন সংগ্রামের বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাটিয়াকুড়া প্রত্যান্ত গ্রাম উন্নয়ন কমিটির একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে মোছাঃ শাহিনা আক্তার তার জীবনের কিছু কথা সবাইকে বলতে চান। তিনি বলেন,২১ বছর পূর্বের কথা যখন তিনি কিশোরী ছিলেন। সেই সময়ে তার পড়াশুনা ও খেলাধুলা করার কথা ছিল। কিন্তু তার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর। হঠাৎ করে মতামত ছাড়া তাকে বিয়ে দেওয়ায় সংসারে অশান্তি, ঝগড়া লেগে থাকতো। সংসারে তার কোন মূল্যায়ন ও কোন বিষয়ে মতামত নেওয়া হতো না। স্বামী দিনমজুরের কাজ করতো। তাতে সংসার ঠিক মতো চলতো না। তখন ছেলে ও মেয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি পরিবারের উপার্জন বৃদ্ধি করার জন্য মাঠে দিন মজুর ও দর্জির কাজ শুরু করেছিন।
শাহিন আক্তা মাঝে মাঝে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ বীরগঞ্জ এপি এর সচেতনতা মূলক কার্যক্রম গুলোতে অংশগ্রহণ করতেন। একদিন ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহায়তাকারীগণ গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করার জন্য তাকে মাটিয়াকুড়া গ্রামের প্রত্যেকটি পাড়া থেকে দুই/তিন জন করে আলোচনা সভায় ডাকে। মাটিয়াকুড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সদস্য হিসেবে মনোনিত হন তিনি।
তারপর থেকে নিজের কাজের পাশাপাশি গ্রাম উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করে। তিনি আরও বলেন,আমার মত যেন আর কারো অল্প বয়সে বিয়ে না হয় এবং তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে না যায়। তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন এই গ্রাম উন্নয়নের মধ্যে দিয়েই আঠারো বছর বয়সের মেয়েদের বাল্য বিবাহ যাতে দেওয়া না হয় সেজন্য কাজ শুরু করেন। বর্তমানে মাটিয়াকুড়া গ্রামে বাল্য বিবাহ বন্ধে অভিভাবকদের সচেতন করতে |
সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি তিনটি পরিবারে বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন। সেই সাথে শিশু শ্রম, শিশু নির্যাতন যেন না হয়, সেই পরিবারগুলোকে সচেতন করে আসছেন।
এছাড়াও আমি কিছু সুবিধা বঞ্চিত পরিবারের মাঝে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ৪৫ টি শিশুর জন্ম নিবন্ধন, ১৫ টি পরিবারে ডিজিএফ কার্ড, ১০ টি পরিবারে ভিজিডি কার্ড, ৭টি পরিবারে বিধবা ভাতা, ১৫টি পরিবারে বয়স্ক ভাতা, ২টি পরিবারে কাবিখা, ১টি পরিবারে মাতৃত্বকালীন ভাতা নিশ্চিত করেছি। এছাড়াও করোনা কালীন সময়ে ১৫৫ জনকে কোভিট-১৯ টীকা গ্রহণে উৎসাহিত করেছি।
আমি ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় ৫দিন ব্যাপি ইকোভিলেজ ও পারমাকালচার প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি। আমি এই পর্যন্ত ২১০ টি পরিবারকে হাতে কলমে জৈব বালাই দমন ব্যবহারে শাক সবজি চাষ ও ফসল উৎপাদনের জন্য পরামর্শ প্রদান করি। এবং বীরগঞ্জ এপির সহযোগিতায় ৪টি ইউনিয়নে ২৫ জন করে ৬টি দলে এবং রংপুরে ১টি দলে ইকোভিলেজ ও পারমাকালচার প্রশিক্ষক হিসেবে সফলতার সাথে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা কাজগুলো করার ফলে সফলতা পেয়েছে এবং তাদের কাজ দেখে জনগন আরো বেশি উৎসাহিত হয়ে ও তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।