প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আসবে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রিসিপ্ট টার্মিনালে।
গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে ভিডিও কনফারেন্সে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে স্থাপিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইনের রিসিপ্ট টার্মিনালে জ্বালানি তেল পাঠানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইন স্থাপন প্রকল্প ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বের আরেকটি নতুন মাইলফলক রচনা করেছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা আরো সহজতর, নির্বিঘœ ও সুদৃঢ় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইন স্থাপন। এতে আশার আলো দেখছেন উত্তারাঞ্চলবাসী। দীর্ঘদিনের জ্বালানি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে উত্তরের ১৬ জেলার মানুষ। নিরবিচ্ছিন্নভাবে জ্বালানী তেল সরবরাহের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষি ও ব্যবসায় বাণিজ্যে ব্যাপক অবদান রাখবে।
উদ্বোধন উপলক্ষে পার্বতীপুর রেলহেড ডিপোর পাশে স্থাপিত রিসিপ্ট টার্মিনালটি বর্ণীল সাজে সাজানো হয়। রাস্তার দু’ধারে শহর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ফেস্টুন ও ব্যানারে সজ্জিত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩’শ ৬ কোটি টাকা।
পার্বতীপুর উপজেলা মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্স প্রদর্শনে এক জমকালো আয়োজন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে যারা উপস্থিত হন তারা হলেন স্থানীয় সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অপারেশন ও পরিবহন পরিচালক অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহাম্মেদ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের বিপনন পরিচালক যুগ্ম সচিব অনুপম বড়–য়া, যমনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গিয়াস উদ্দিন আনসারি, পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মাসুদুর রহমান, মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবু সালেহ্্ ইকবাল পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালন ব্যবস্থাপক মোঃ আব্দুল সোবহান এবং পাইপ লাইন প্রকল্পের মহা ব্যবস্থাপক (এম.ডি) টিপু সুলতান, জেলা প্রশাসক খালিদ মোহাম্মদ জাকী, পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহাম্মেদ, পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, ও পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন। এছাড়াও পার্বতীপুর ডিপোতে কর্মরত তিন কোম্পানির কর্মকর্তাসহ ভারত অংশের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ পাইপ লাইন নির্মান প্রকল্পের আওতায় মোট ১৩১.৫৭ কি.মি. পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ১২৬.৫৭ কি.মি. এবং ভারত অংশে ৫কি.মি. পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ভারত সরকার আইবিএফবিএল এর ভারতীয় অংশের ৫কি.মি. পাইপ লাইন এবং বাংলাদেশ অংশের ১২৬.৫৭ কি.মি. পাইপ লাইন নির্মানে অর্থায়ন ও কারিগরি সহযোগীতা প্রদান করেছে। বাংলাদেশ অংশে এই আপদকালীন তেল ডিপো নির্মানের ফলে প্রতিকুল পরিস্থিতে নির্বিঘেœ জ্বালানী তেল আমদানি ও গ্রহণ নিশ্চিত হবে। পূর্বে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ৬০ থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানী করা যেত। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী বার্ষিক প্রায় ২.৫ লক্ষ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা সহজতর হবে। পার্বতীপুর রেলহেড ডিপোর জ্বালানী তেলের চাহিদা পূরণের জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে তেল সরবরাহ করা হতো। পার্বতীপুর রেলগেড ডিপো থেকে ৮’শ থেকে ১ হাজার মেট্রিক জ্বালানী তেল উত্তরের ১৬জেলাতে সরবরাহ করা যাবে। এই রিসিপ্ট টার্মিনাল নির্মানের ফলে পার্বতীপুরে অতিরীক্ত ২৯ হাজার মেট্রিক টনের জ্বালানী তেলের মজুদ বৃদ্ধি পেয়ে মজুদ ক্ষমতা দাড়াবে ৪৩ হাজার মেট্রিক টন।
উত্তরের ১৬ জেলায় নিরিবিচ্ছন্নভাবে ডিজেল সরবরাহ ও নীলফামারীর সৈয়দপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল (ডিজেল) আমদানির রিসিভ টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাইপলাইন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ১৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে।