পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ পঞ্চগড় সদর উপজেলার জালাসি-হাড়িভাসা আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গামালী ব্রীজের পানি প্রবাহ বন্ধ করে গড়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। ব্রীজ নিচ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ থাকায় পৌর এলাকার হঠাৎপাড়া ও সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি। পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার আশংকায় রয়েছে তারা। শুধু তাই নয়; জমি থেকে পানি সরে না গেলে আমন মৌসূমে শতাধিক একর জমিতে চারা লাগানো সম্ভব হবে না।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জালাসি-হাড়িভাসা সড়কের বানিয়ার মিল নামক স্থানে ভাঙ্গামালি ব্রীজের নীচ দিয়ে বর্ষার সময় কয়েকটি গ্রামের পানি প্রবাহিত হয়ে আসছিল। গত বর্ষা মৌসূমেও এই ব্রীজের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। গত এক বছরের মধ্যে ব্রীজের দক্ষিণে পৌর এলাকার পশ্চিম চানপাড়া গ্রামে জমি কিনে মানুষজন অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করতে থাকে। ঘর ও দেয়াল নির্মাণের ফলে পানি চলাচলের জায়গা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের পরদিন শুক্রবার রাতভর ভারি বৃষ্টির কারণে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। ব্রীজের উজানে পৌর এলাকার হঠাৎপাড়া গ্রামে পানি জমে থেকে সেই পানি চলে যায় পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া গ্রামে। পানি সরে যাওয়ার জন্য বলেয়াপাড়ায় রিং কার্লভার্ট থাকার কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে সেখানেও শুরু হয় জলাবদ্ধতা। এরই মধ্যে গত রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় গত শুক্রবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত শতাধিক পরিবারে রান্নার চুলো জ্বলেনি। ভ‚ক্তভোগিরা জানিয়েছে বিষয়টি পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনকে জানালেও তারা এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বলেয়াপাড়া গ্রামে আলোর পথিক নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৩০টি পরিবারের জন্য গতকাল সোমবার খিচুরী রান্না করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছে। সরকারিভাবে তাদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা।
বলেয়াপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ সলিমত আলী জানান, গত চারদিন ধরে আমাদের বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। ঘরে পানি উঠে পড়ায় রাতে বাড়িতেও থাকতে পারছি না। আশপাশের মানুষজন আমাদের রান্না করে খাবার দিচ্ছে। তিনি জানান, আমার জীবনেও দেখিনি আমাদের বাড়িতে পানি উঠছে। গত বর্ষায়ও আমাদের বাড়িতে পানি উঠেনি। ভাঙ্গামালি ব্রীজ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে আমাদের গ্রামের প্রায় ৫০টি বাড়িতে কয়েকদিন ধরে পানি লেগে থাকছে। ওই ব্রীজ দিয়ে পানি চলাচল স্বাভাবিক না হলে গোটা বর্ষায় আমাদের চরম দূর্ভোগে থাকতে হবে। এছাড়া আবাদি জমিতে এত পরিমান পানি লেগে আছে যে, পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত এসকল জমিতে আমন চারা রোপন করা সম্ভব হবে না।
পঞ্চগড় সদর ইউপি চেয়ারম্যান আল ইমরান খান জানান, আমি নিজে এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। জলাবদ্ধতায় কয়েকটি পরিবার চরম দূর্ভোগে রয়েছে। যে ব্রীজ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে সেটি পৌর এলাকার। আমি স্থানীয় কাউন্সিলর লুৎফর রহমানের সাথে কথা বলেছি। বিষয়টি আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবগত করেছি। আমার একার পক্ষে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।
পঞ্চগড় পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন বলেন, আমি নিজেই এলাকা হঠাৎ পাড়া পরিদর্শনে এসেছি। ব্রীজের পানি প্রবাহ বন্ধ করে কিভাবে বসতবাড়ি গড়ে উঠল তা খতিয়ে দেখছি। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন কল্পে আমি প্রশাসনের সহায়তায় আমি উদ্যোগ গ্রহণ করব।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল হক জানান, আমি নিজেই উপদ্রæত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার ও খিচুরী বিতরণের নির্দেশ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী করে তাদের সহায়তা করা হবে। আর ব্রীজটি যেহেতু পৌরসভা এলাকার মধ্যে। তাই আমি মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ করেছি কিভাবে ওই ব্রীজের পানি চলাচল স্বাভাবিক করা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।