বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি। শুধু লিচু নয় দিনাজপুরের উপজেলার উৎপাদিত লিচুর পাশা-পাশি আমও স্বাদে ও গন্ধে সুখ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের সুপার সোপে স্থান পেতে শুরু করেছে এউপজেলার আম ও লিচু। পরিক্ষামূলক লিচুর পরে এবার এউপজেলা থেকে প্রায় ১০ টন আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেট কোম্পানি লিঃ এর মাধ্যমে ইংল্যান্ডের সুপার সোপে স্থান পাবার জন্য বিমানে উঠেছে ৫০০ কেজি আম। এর মধ্যে ৩০০ কেজি বারি ৪ ও ২০০ কেজি ব্যানানা ম্যাংগো আম। আঁশমুক্ত আম গুলো দেখতে সুন্দর, ওজনে প্রতিটি ৬শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম। এসব আম সংগ্রহ করা হয়েছে, বিরল উপজেলার ৪নং শহরগ্রাম ইউপি’র লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক মোমিনুল ইসলামের আম বাগান থেকে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুজ্জামান এপ্রতিনিধিকে জানান, দিনাজপুর জেলায় লিচু ও আম পর্যাপ্ত পরিমানে উৎপাদন হয়। এ জেলার আম ও লিচু স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে চাহিদা মিটানো হয়। প্রথম বারের মত এ জেলা থেকে ইউরোপের বাজারে লিচু পাঠানোর পর এবার আমও বিদেশে পাঠানোর জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রপ্তানিকারকদের আগ্রহের কারণে পরিক্ষামূলক ভাবে ৫০০ কেজি বারি ৪ ও ব্যানানা ম্যাংগো আম ইংল্যান্ডে পাঠানো হল। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত রপ্তানি যোগ্য এসব আম উৎপাদন প্রকল্পের রপ্তানির উদ্দ্যশ্যে মোট ২৩ টি আম বাগানের মধ্য থেকে ৬টি বাগানের প্রায় ৮ শতাধিক গাছ থেকে মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ের বারি-৪ জাতের প্রায় ১৬ মেট্রিক টন আম ব্যাগিং করে রপ্তানির লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও আরো ৪ টি বাগান থেকে বারোমাসি ও লেট ভেরাইটির বেনানা ম্যাংগো ও কাটিমন ৪ মেট্রিক টন আমও প্রস্তুত রাখা আছে। রপ্তানির জন্য প্রস্তুত এই আম গুলো রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর চাহিদা মোতাবেক ধাপে ধাপে পাঠানো হবে। আশা করি এই আম রপ্তানির মধ্য দিয়ে দিনাজপুর জেলা আমের জন্য বিশেষ পরিচিতির পাশা পাশি ভালো বাজার মূল্য ও আগামী দিনে রপ্তানি যোগ্য ভাল ক্ষেত্র তৈরী হবে।
বাগান মালিক মোঃ মোমিনুল ইসলাম জানান, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমার বাগানের আম দেশের সীমানা পাড়ি দিয়ে প্রথম বিদেশে যাচ্ছে। আমার বাগানের আম বিষমুক্ত ও নিরাপদ। আশা করি আমার বাগানের উৎপাদিত আম বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের সুনাম অর্জন করবে। তিনি জানান, বিরল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোস্তাফা হাসান ইমাম স্যারের কথায় অনুপ্রানিত হয়ে বিদেশে রপ্তানি যোগ্য আম বাগান করি। আজ আমি অত্যন্ত খুশি যাদের পরামর্শে এই বাগান করেছি আজ তারাই ভালো দামে আমার আম কিনে আম বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, কৃষকদের আশা প্রত্যাশা জেনে এমন কাজে উৎসাহিত করে সফল ভাবে রপ্তানির মধ্য দিয়ে কৃষকদের লাভবান হতে সাহায্য করাটা পরম তৃপ্তির। ব্যাগিং রোগিং সহ প্রত্যাকটি কাজের মাধ্যমে উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরন করে আমগুলো উৎপাদন করা হয়েছে। যাতে করে আমগুলো বহির্বিশ্বের বাজার গুলোতে যেন জায়গা করে নিতে পারে। আমাদের দেশে যে পরিমানে আম উৎপাদন হয় কিন্তু সেই পরিমানে রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। লিচুরমত রপ্তানি যোগ্য এসব আম স্বাদে-গন্ধে সুখ্যাতি ছড়েয়ে যেন বিশ্ব বাজারে জায়গা করে নিতে পারে। আমারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রপ্তানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী বিরল উপজেলার নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। আশারাখি এই আম রপ্তানির করে আমরা বৈদেশি মূদ্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশ ও কৃষকরা লাভবান হবে।