ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি\ তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রিয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেছেন, ২০০৬সালের ২৬আগষ্ট ফুলবাড়ীর গণআন্দোলন শুধু ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলন ছিল না, ফুলবাড়ীর গণআন্দোলন ছিল, ফুলবাড়ীসহ সারা দেশের প্রাণ-প্রকৃতি মানুষের জীবন-জীবিকাসহ দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন।
গতকাল শনিবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর গণআন্দোলনের শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ আরও বলেন ২০০৬ সালের তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে এসে ৬দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানিয়েছিল এবং তিনি ক্ষমতায় গিয়ে ৬দফা চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গিকার করেছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সাথে করা সেই অঙ্গিকার ১৫ বছরেও বাস্তবায়ন করেননি, উপরোন্ত এশিয়া এ্যানার্জি আন্দোলনকারী নেতাদের উপর মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি অনতিবিলম্বে সেই অঙ্গিকার ৬দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করার আহবান জানান, তা না হলে আবোরো গণআন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী দেন।
ফুলবাড়ীর গণআন্দোলনের ১৭বছর, শোকসভায় তেলগ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী কমিনিউস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলির সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু, ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন, সিপিবি দিনাজপুর জেলা সভাপতি এ্যাডভোকেট মেহেরুল ইসলামসহ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দগণ।
সভায় গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ফুলবাড়ীর মানুষ ২০০৬ সালে গণআন্দোলন করে সারাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলের পথ দেখিয়েছে। ফুলবাড়ীর আন্দোলন ছিল মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, কারণ এদেশের মালিক জনগণ,তাই জনগণেল সেই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে,সেই কারনে আবারো অধিকার আদায়ের আন্দোলনের জন্য তিনি ফুলবাড়ীসহ দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
শোকসভার পূর্বে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফুলবাড়ী শহরের নিমতলা মোড় থেকে একটি শোকর্যালী পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে ২০০৬সালের ২৬আগষ্ট আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে নিহত শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে এসে পুষ্পার্পন করে স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে শোকসভায় মিলিত হয়।
এছাড়া ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলমের নেতৃত্বে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও পেশাজিবী সংগঠনের নেতৃত্বে পৃথক পৃথকভাবে শোক র্যালী ও পুষ্পার্পন করা হয়।
এদিকে, শোকসভা শেষে ওই আন্দোলনে আহত-নিহতদের বাড়ী যান নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর সাথে তৎকালিন সরকারের ৬দফা চুক্তি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম ঘোষনা করেছেন, তেলগ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল। ফুলবাড়ী গণআন্দোলনের ১৭ বছর প্রতি শোকসভায় তিনি এই আল্টিমেটাম ঘোষনা করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারি এশিয়া এনার্জি নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানীর ফুলবাড়ীস্থ অফিস ঘেরাও কর্মসুচি পালন করতে গেলে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মিছিলের উপর টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষন করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত ছাত্র তরিকুল ইসলাম, নিরিহ যুবক আমিন ও সালেকিন নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় আরো তিন শতাধিক মিছিলকারি। এদের মধ্যে বাবলু রায় নামে একজন চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এখনও সেই গুলির ক্ষত বহন করছে অনেকে। এরপর ফুলবাড়ীবাসীর টানা চারদিনের গণআন্দোলনের মূখে ৩০আগষ্ট, তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ী বাসির সঙ্গে ছয় দফা শর্তে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যা ফুলবাড়ী ছয় দফা চুক্তি বলে পরিচিত। এরপর থেকে দিনটিকে ফুলবাড়ী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে অরাজনৈতিক সম্মিলিত পেশাজীবি সংগঠন এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আজও আন্দোলন করে আসছে।