দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্য পদে দিনাজপুর সংসদীয় ৬টি আসনের মূলত আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই ভোট যুদ্ধ হবে। এদিকে মননোয়নপত্র প্রত্যাহারের অন্তিম মূহুর্তে জাকের পার্টির ৪জন ও জাতীয় পার্টির ১জন প্রত্যাহার করেছেন। এতে দিনাজপুরের ৬টি আসনে নারীসহ প্রার্থী ৮টি দলের ২৬জন প্রতিদ্বন্দিতা রয়েছেন।
গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দিনাজপুরের ৬টি আসনের প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলা রির্টানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেন।
দিনাজপুর ১ (বীরগঞ্জ কাহারোল) আওয়ামী লীগ মনোরঞ্জনশীল গোপাল(নৌকা), জাতীয় পার্টির শাহিনুর ইসলাম(লাঙ্গল),ওয়ার্কার্স পার্টির আব্দুল হক(হাতুড়ী) ও এনপিপির জহরুল ইসলাম(আম) এবং আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র আলহাজ¦ জাকারিয়া জাকা (ট্রাক)সহ মোট ৫জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ।
এই আসনে ৪বারের সংসদ সদস্য বর্তমান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মনোরঞ্জনশীল গোপাল এবারও নৌকা মার্কা পেয়েছেন। তার সাথে মূলত বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকারিয়া জাকার মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে। অন্যান্য প্রাথীর তেমন কোন প্রভাব নেই।
দিনাজপুর ২ (বিরল বোচাগঞ্জ) খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে এবারও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। বর্তমানে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দিনাজপুর জেলার একমাত্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় তার নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছেন। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত তেমন প্রার্থী নেই। এই আসনে যদিও ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তাই আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌকা) শক্ত অবস্থানে থাকায় জোড়ালো প্রতিদ্বন্দিতা না হলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী পূর্বের ১৯৮৮সালে জাপার বিজয়ী হওয়ার ইমেজকে কাজে লাগাতে চেষ্ঠা করবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহাবুব আলম (লাঙ্গল) ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার চৌধুরী জীবন(ঈগল মার্কাা)।
দিনাজপুর ৩ ( সদর) এই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ ও সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম(নৌকা) এবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। তিনবারের সংসদ সদস্য হওয়ায় এলাকায় শক্ত অবস্থান তার।এই আসনে জাতীয় পার্টির আহমেদ শফি রুবেল(লাঙ্গল), ইসলামী ঐক্যজোট ফরহাদ আলম(মিনার), এনপিপির পারুল সরকার লিমা(আম), মুসলিম লীগের আব্দুস সালম(হাত পাঞ্জা) ও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র বিশ^জিৎ ঘোষ কাঞ্চন(ট্রাক)সহ মোট ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে মূলত বর্তমান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকবালুর রহিম। এ আসনে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ কাঞ্চনএর সাথে মূলত ভোট যুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।তবে তাদের মাঝে ফায়দা নিতে প্রস্তুত জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহমেদ শফি রুবেল। এনিয়ে ত্রি-মুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুর ৪ (চিরিরবন্দর খানসামা) এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।এই আসনে জাতীয় পার্টির মোনাজাত উদ্দিন(লাঙ্গল) ও এনপিপির আজিজা সুলতানা(আম) এবং আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র সহমোট ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই আসনে মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সাবেক চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগকারী আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী তারিকুল ইসলাম তারিকের(ট্রাক) সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ইতিপূর্বে এই উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
দিনাজপুর ৫(ফুলবাড়ী পার্বতীপুর) আওয়ামী লীগ মনোনীত ৭ বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী হেভিওয়েট প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এবারও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম(লাঙ্গল), এনপিপির শওকত আলী(আম),একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা হযরত আলী বেলাল(ট্রাক) রয়েছেন। তিনি পার্বতীপুর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য। এই আসন থেকে উল্লেখযোগ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় ৭ বারের সংসদ সদস্য হেভিওয়েট প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান ফিজার এর সাথে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো প্রার্থী নেই।
দিনাজপুর ৬ ( বিরামপুর নবাবগঞ্জ হাকিমপুর ঘোড়াঘাট) এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত তিনবারের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ আসনে একজন আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুল হক চৌধুরীর(ট্রাক) সাথেও মূলত বর্তমান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিবলী সাদিকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাসদ এর শাহ আলম বিশ^াস(মশাল),তৃণমুল বিএনপির মোফাজ্জল হোসেন(সোনালী আঁশ)।
দিনাজপুর-৪ আসনে শুরু আনুষ্ঠানিক প্রচারণা
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৪ (খানসামা ও চিরিরবন্দর) আসনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার শাকিল আহমেদ প্রার্থী কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের প্রতীক বরাদ্দ দেন।
এই সংসদীয় আসনে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া ৪ প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক পাওয়া সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক পেয়েছেন ট্রাক প্রতীক, জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত মোনাজাত চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী আজিজা সুলতানা আম প্রতীকে ভোটে লড়বেন।
কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে আজ থেকেই শুরু হয়েছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। প্রতীক নিয়েই প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। এই প্রচারণা চলবে আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৩।
সরেজমিনে উপজেলার পাকেরহাট, টংগুয়া ও ভুল্লারহাট বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর পরেই প্রার্থীদের সমর্থকরা পোস্টার ও ব্যানার লাগানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা।
ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তারিকুল ইসলাম তারিকের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বতা জমে উঠবে এবার।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তাজ উদ্দিন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি প্রার্থী ও সমর্থকেরা আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাবেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সকল পক্ষের সহায়তা আমাদের প্রত্যাশিত।