বুধবার , ১০ জানুয়ারি ২০২৪ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাপমাত্রা ১১দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে বিপর্যস্থ দিনাজপুর

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
জানুয়ারি ১০, ২০২৪ ১০:০৭ অপরাহ্ণ

পৌষের শেষে কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়ায় দিনাজপুরে কনকনে শীতের প্রকোপ। বিকালের পর থেকে শুরু হয় হিমেল বাতাস, সন্ধা থেকে পড়তে থাকে ঘন কুয়াশা। সকালে ও রাতে ঘনকুয়াশায় ঢাকা পড়ছে দিনাজপুর। আর হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে কাপঁছে খেটে খাওয়া ছিন্নমুল মানুষ। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে অঞ্চল। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করেছে। অনেকে সন্ধা কিংবা সকালে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন। কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্থ জনজীবন। উষ্ণতার আশায় কেউবা আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন আবার কেউ ভিড় জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাপমাত্রার ছন্দপতনে শিশুদের জ¦র, স্বর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ার মতো বিভিন্ন রোগ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
বুধবার সকাল ৯টায় দিনাজপুর জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৭ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মাসে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়।
অটোচালক ফারুক জানায়, ঘনকুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। সকাল ৮টা পার হয়েও ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আগে দিনে ৭–৮শ টাকা আয় হতো। এখন ৪–৫শ টাকা আয় হয় না।
শহরের ষষ্টিতলা মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম ফুলাল বলেন, কয়েক দিন থেকে ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীত বেশি হওয়ায় সকাল ও সন্ধ্যায় রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে যায়। রাতে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেয়ার চেষ্ঠা করছি।
দিনমজুর আব্দুর রহিম জানান, দুই দিন থেকে সকালে ঠান্ডা বাতাসে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। কাজে যেতে পারছি না। আবার কাজেও কেউ ডাকে না।
দিনাজপুর-পার্বতীপুর রোডের ট্রাক সুমন ইসলাম বলেন, রাত থেকে ঘন কুয়াশা ঢাকা পড়ছে। সড়কে ২০ ফিট দূরত্বের মধ্যে বোঝা যায় না সামনে থেকে গাড়ি আসছে কি না। এজন্য ফুল হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বড় গ্রামের ইট ভাটার রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরি ভাটায় যাইনি। পানির মতো ঠান্ডা শীত পড়ছে। আর ঘন কুয়াশা বাতাসের কারণে বাসায় বসে আছি। কাজে গেলে ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে যায়।
জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বুধবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৭ভাগ। চলতি সপ্তাহে জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। এছাড়া জানুয়ারি মাসে এই জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার এ এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ সময চলাফেরায় সবাইকে সাবধান হতে হবে, বিশেষ করে শিশু ও বযস্কদের ঠান্ডা লাগানো একেবারেই যাবে না। পাশাপাশি কাঁচা খেজুরের রস খাওযা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা হিলি
হাকিমপুর সংবাদদাতা \ শৈত্যপ্রবাহের কারণে দিনাজপুরের হিলিতে ফের ঘন কুয়াশার সাথে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। ঘন কুয়াশা, মেঘলা আকাশ,হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আজ দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি। মঙ্গলবার দুপুরে সূর্যের দেখা মিলেও বুধবার সকাল থেকে ঘন কুয়াশা ও মেঘে ঢেকে রয়েছে আকাশ। সকাল থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ঘন কুয়াশা। কুয়াশার কারণে রাস্তা-ঘাট কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। দূর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ খেটে যাওয়া মানুষ। কাজের সন্ধানে বের হয়েও কাজ পাঁচ্ছেন না তারা। দোকানপাট খুলছে দেরিতে। বেশি কষ্টে আছেন ছিন্নমুল ও বৃদ্ধ মানুষেরা। শীতবন্ত্রের অভাবে বাড়ির বাহিরে বের হতে পারছেন না তারা। এদিকে সকালে স্থলবন্দর থেকে ভারতীয় খালি ট্রাকগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে বের হয়ে যেতে দেখা গেছে। হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠান্ডার কারণে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষজন। শীতের কারণে ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়ায় প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই ঠান্ডাজনিত কারণে অনেক শিশু হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছে। কয়েক জন দিনমজুর কাজের সন্ধানে বের হয়ে হিলি বাজারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
কথা হয় দিনমজুর মজিবরের সাথে। তিনি বলেন, কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে সকাল ৭ টায় বের হয়েছি। আজ একটু বেশি কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস। সকাল থেকে বসে আছি কেউ আসেনি কাজ করে নেওয়ার জন্য। আমরা দিনআনি দিন খাই। আজ কাজ না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে।আমরা একদিন কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না। খুব কষ্ট হয় আমাদের পরিবারপরিজন নিয়ে।
হাকিমপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার অমিত রায় জানান, এ পর্যন্ত উপজেলার ১ টি পৌরসভাসহ ৩ টি ইউনিয়নে ২০০০ হাজার শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আসলে সেবসব শীতবস্ত্র শীতার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও