বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ॥ দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের বীরগঞ্জ। উপজেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সোনালি বোরো ধান। কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলনের পরও কাঙ্ক্ষিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। হাট-বাজারে ধানের দাম কম থাকায় প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাই ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বোরোধান উৎপাদন ভালো হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। কমেছে ধানের দাম, বেড়েছে কৃষকের হতাশা।
উপজেলার শিবরামপুর, পলাশবাড়ী, শতগ্রাম, পাল্টাপুর, সুজালপুর, নিজপাড়া, মোহাম্মদপুর,ভোগনগর, সাতোর,মোহনপুর ও মরিচা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরোর সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়, কেউ ভ্যানে, কেউ গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ধান। আবার কেউ প্রচণ্ড রোদে জমির উপর ও খোলা মাঠে ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের কৈকুড়ী গ্রামের কৃষক রামপদ রায় বলেন, আমি সাধারণ কৃষক। মানুষের কাছে বর্গা নিয়ে ৪ বিঘা জমিতে বোর ধান লাগিয়েছি। সৃষ্টিকর্তার আর্শীবাদে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের যে বাজার তাতে লাভ নাই। এক বিঘা জমি ২০ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়েছি, এরপর হাল চাষ, ধানের বীজ, পানি, সার কীটনাশক সব কিছুর যে দাম তাতে এদিকে খরচ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন ৪২-৪৫ মণ। বর্তমান ধানের বাজারে ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা মণ। তাহলে লাভ কোথায় ধান চাষ করে।
কৃষক ব্রজেন রায় বলেন, ধান আবাদ করে কৃষকের কিছু থাকে না। প্রতিবার ধানের দাম কম থাকে। কিন্তু সার, কীটনাশক, পানি, ধান কাটা শ্রমিকের অতিরিক্ত খরচ লাগে। এক বিঘা জমিতে খরচ ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। ঝড় বৃষ্টি না থাকায় ধানের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে। সব ধান বিক্রি করে অল্প কিছু টাকা থাকে। তা দিয়ে পোষায় না। বাজারে সব কিছুর দামে বেশি।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১০ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেয়েছি ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই ধান কাটার পারমর্শ দিচ্ছি । চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ধানের ফলন টার্গেট ৪.২ মেট্রিক টন। কিন্তু আমরা আগাম জাতের ধানগুলোতে হেক্টর প্রতি ৪ মেট্রিক টন ধান পাচ্ছি।