শনিবার , ২৯ জুন ২০২৪ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘‘দ্বৈত নীতি’’ -আনিসুর রহমান বাকি- সাংবাদিক, লেখক,কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
জুন ২৯, ২০২৪ ৪:০৩ অপরাহ্ণ

আমি /আমরা দেশ অনেক স্থানে দ্বৈত নীতির একটি সূত্র আমার খুব মনে পড়ছে। তিনটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রথমত,সারা দেশে যানবাহন বেচাকেনা হচ্ছে সেটি নতুন যানবাহনের ক্রয়ের উপর কথা বলছি। আমার এলাকাকে দিয়ে উদাহরণ টেনে লেখছি। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় আমার নিবাস। লক্ষ্য করছি রাণীশংকৈল উপজেলায় মটর সাইকেল বিক্রয়ের জন্য ৭/৮টি শো-রুম রয়েছে অথচ, এলাকায় হাজার হাজার মটর সাইকেল ক্রেতা মটর সাইকেল কিনেছেন। ক্রেতাদের সংখ্যা বা ব্যবহারকারীদের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের অধিক হতে পারে সম্ভাব্য ধারণা। একটি মটর সাইকেল রাস্তায় চালানোর জন্য প্রয়োজন গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স ,হেলমেট ইত্যাদি। এসব না থাকলে প্রচলিত আইনে ট্রাফিক সার্জেন আটক করে জরিমান করার বিধান রয়েছে। আসলে এ বিধানে গাড়ির লাইসেন্স না থাকার কারণে এইসব হাজার হাজার মানুষকে পড়তে হয় ট্রাফিক বিড়রম্বনায়। ট্রাফিক পরিচালনা করার জন্য নিয়োগ করা হয় ট্রাফিক সার্জেন্ট সহ কিছু পুলিশ বা পুলিশ কর্মকর্তাকে অথচ ট্রাফিক, বিড়ম্বনা ও রাষ্ট্রীয় জনবল, ট্রাফিক সার্জেন্ট ব্যবহার প্রয়োজন নেই যদি হাজার হাজার মটর সাইকেল ক্রেতাদের ক্রয়ের সময় মাত্র ৭/৮টি শো-রুমকে দায়িত্ব দিয়ে লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু রাখা যেতো তাহলে সেখানে এই যান বাহানকারিদের কে বিড়ম্বনা শিকার হতে হতো না। বাস্তবে এরও দেখা গেছে একজন মটর সাইকেল মালিক জেলা সদরে গিয়ে লাইসেন্স অফিসে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়ে লাইসেন্স করতে হচ্ছে অথচ সেখানে আবার অনেকেই অনৈতিক আচরণের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এসব লাইসেন্স বিতরণের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে লোক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা করতে হচ্ছে। অথচ শো-রুমের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান ব্যবস্থা চালু রাখা যায় তাহলে লাইসেন্স বিতরণের জন্য এতো বেশি জনবলের প্রয়োজন নাই।
দ্বিতীয়তা,সারাদেশে ধূমপায়ী মানুষের সংখ্যা কোটিও ছাড়াতে পারে। ধুমপান নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে কোটি মানুষের বিপরীতে একটি আইন চালু করা হয় যে,‘‘ কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে ধূমপান করলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে’’। একদিকে কোটি মানুষ অপর দিকে কয়েকটি ধুমপান তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যদি বলা হয় ধুমপানে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে এবং ধুমপানের কারণে অনেকেই দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে, তাহলে সে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যবস্তা করলে কোটি মানুষের পেছনে সরকারি লোকদের জরিমানা করার জন্য ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না । একটি পরিসংখ্যান এ দেখা গেছে ধুমপানের কারণে ঔষথ সেবনের বিপরীতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। আমি জানি, ধুমপান কোম্পানি বন্ধ হলে কিছু মানুষ বেকার হতে পারে এবং সেখান থেকে আসা ট্যাক্স বন্ধ হতে পারে। গণতান্ত্রিক দেশে কোটি মানুষের পেছনে ধাওয়া না করে কোম্পানী গুলি বন্ধ করলেই চলতো। যদি মনে করা হয় ধুমপানের কারণে প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রের আয় হয় এবং ধুমপানে ব্যধির কারণে কোটি কোটি টাকার ঔষধ বিক্রি হয়ে সেখান থেকে সরকার অনেক অর্থ পান তাহলে কোটি মানুষকে আইন করে নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজন কেন? ধুমপানের জন্য দায় কী শুধু কোটি মানুষ নাকি ধুমপান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলি। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেই তো ধুমপান বন্ধ হবে তাহলে এটি করা হচ্ছে না কেন? এখানেই কি বোঝা যায় না যে, ট্যাক্স নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালু রাখা হয়েছে অপর দিকে কোটি মানুষকে ধুমপান বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটা কি দ্বৈত নীতি নয়?
তৃতীয়ত,দেশের উন্নয়নকে ধরে রাখবার জন্য ইট হচ্ছে একটি প্রথম ও প্রধান উপাদান, দেশে চলতে নির্মাণ উন্নয়নের একটি সুন্দর সময়। অথচ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যেখানে তৈরি হয় ইট সেসব কারখান ইট ভাটা চালু রাখা দরকার অথচ বাস্তবে কি দেখছি অবৈধ ভাটা বন্ধের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের দেখা গেছে ইট ভাটা চালু রাখার জন্য সরকারি যেসব অনুমতির প্রয়োজন এই সব অনুমতির কাগজ পত্র প্রায় শত ভাগ ইট ভাটার নেই। ষড় ঋতুর বাংলাদেশে ষড় ঋতু হারাতে বসেছে। ইট ভাটা চালু রাখার কারণে নিধন হচ্ছে বৃক্ষ। ইট ভাটার ধোয়ায় বিষাক্ত হচ্ছে আবহাওয়া সে কারণেই দেশে তথা বিশ্বে বৈশ্বায়িক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে। বৈশ্বিক আবহাওয়াকে অনুকুলে রাখার জন্য সমাজ বাদীরা বার বার ইট ভাটা বন্ধ করার জন্য হাইকোট এ রিট করতে দেখা যায়। রিটের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ইট ভাটা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করে ভ্রাম্যমান আদালত করে অনেক ইট ভাটাকে জরিমানার আওতায় অনেক স্থানে ইট ভাটা ভেঙ্গে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
এখানেই আমার প্রশ্ন, স্থানীয় প্রশাসন কোনো ইট ভাটাকে ভেঙ্গে গড়িয়ে দিচ্ছেন, আবার কোনো ভাটায় লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা করে ভাটা না করার জন্য নিরুৎসাহিত করছেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ঠাকুরগাঁও জেলার অথবা সারা দেশের ইট ভাটা চালিয়ে ইট উৎপাদন করা হচ্ছে নামে মাত্র কিছু ইট ভাটাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ক্ষতি গ্রস্থ করা হচ্ছে অথচ সারা দেশের ইট ভাটা চালিয়ে ইট উৎপাদন করা হচ্ছে নামে মাত্র । কিছু ইট ভাটাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ক্ষতি গ্রস্থ করা হচ্ছে অথচ সিংহভাগ ভাটা চালু রেখে ইট উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

এখানেই আমার প্রশ্ন, স্থানীয় প্রশাসন কোনো ইট ভাটাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছেন, আবার কোনো ভাটায় লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা করে ভাটা না করার জন্য নিরুৎসাহিত করছেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, ঠাকুরগাঁও জেলার অথবা সারা দেশর ইট ভাটা চালিয়ে ইট উৎপাদন করা হচ্ছে নামে মাত্র কিছু ইট ভাটাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ক্ষতি গ্রস্থ করা হচ্ছে অথচ সিংহভাগ ভাটা চালু রেখে ইট উৎপদানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এখানে দ্বৈত নীতি চালু রাখার মতো ঘটনা ঘটছে কোনো ভাটায় প্রয়োগ করা হচ্ছে আইন আবার কোনো ভাটায় আইন প্রয়োগ না করেই পরোক্ষ ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নকে ধরে রাখার জন্য ইটের বিশেষ প্রয়োজন তাহলে এতো নাটক কেন হয় বন্ধ হবে নয়তো বা চালু থাকবে এটিই কী হওয়া উচিৎ নয়। ঐ সময় ইটভাটা থেখে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার উৎসকর , লাইসেন্স ফি, ভ্যাট, ফায়ার সার্ভিস ফি, ভ‚মি রাজস্ব্য কর খাজনা, ট্রেড লাইসেন্স ফি ইত্যাদি।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও