বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা সদর ও শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীর নিপুণ হাতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। রাতদিন পরিশ্রম করে মাটি দিয়ে দেবীর অবয়ব নির্মাণ করছেন কারিগররা। পাশাপাশি চলছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমা তৈরির কাজ।
ক্রমেই এগিয়ে আসছে দুর্গাপূজার তিথি। পঞ্জিকা মতে আর মাত্র ১২ দিনের অপেক্ষা। ঢাকে কাঠি পড়বে ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর দিন। শরতের এই অকালবোধনে স্বামীর বাড়ি কৈলাশ থেকে মর্ত্যে বাপের বাড়ি আসবেন দশভূজা দুর্গা। সঙ্গে থাকবে তার চার ছেলেমেয়ে, প্রত্যেকের বাহন এবং মহিষাসুর।
বেলপাতা, ধান-দূর্বাসহ হরেক উপকরণে পূজিত হবেন তিনি। নানা আচার-উপাচার মেনে দশমীর দিন দেবীকে বিদায় দেবেন ভক্তরা।
এবার দেবী আসবেন ঘোড়া বা ঘোটকে চড়ে, ফিরে যাবেন দোলায়। দোলা হলো মড়কের প্রতীক, মহামারির চিহ্ন। তবে দেবীর আগমনও শুভ বার্তার প্রতীক না। ঘোড়ায় আসলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে, সামাজিক ও রাজনৈতিকস্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে।
বাঙালি হিন্দুদের এই মহোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে এ উপজেলার শিল্পীদের। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা চলছে বীরগঞ্জে মন্দিরগুলোতে।
প্রতিমা কারিগরেরা রাত-দিন কাজ করছেন অপরূপ রূপে দেবী দুর্গা, সরস্বতী , লক্ষী, কার্তিক ও গণেশকে সাজিয়ে তুলতে।
দুর্গাপূজা ও কালীপূজো, ফলে এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে ব্যস্ততা বেশি হওয়ায় পুরুষের পাশাপাশি পালপাড়ার নারী ও শিশুরাও কাজ করছেন রাত-দিন। কিন্তু প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ও লাভ হচ্ছে না বলে দাবি কারিগরদের। দেবী দুর্গার যে অবয়বে ভক্তির মাধ্যমে দেবীর মন জয়ের প্রার্থনা করবেন ভক্তরা সেই অবয়ব বা প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত বীরগঞ্জ উপজেলা প্রতিমা কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। মান ভালো হওয়ায় এ উপজেলার কারিগরদের তৈরি প্রতিমায় জেলার সকল পূজামন্ডপের পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পূজামন্ডপগুলোতেও যাবে এখানে তৈরি দুর্গা প্রতিমা।
আর তাই এখানকার পাল ও কুমার বাড়ির ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজ-গামীরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন ভক্তদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি করতে।
অধিকাংশ প্রতিমারই প্রতিকৃতি তৈরি হয়েছে এখন অপক্ষা শুধু রং আর তুলির আচরের। অথচ নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর কঠোর পরিশ্রম করে যারা তৈরি করেছেন প্রতিমা, তাদের অনেকেই আজ বিমুখ। কারণ প্রতিমা তৈরির অন্যতম উপকরণ মাটি, কাঠ, খড়, বাঁশ, লোহা ও রংসহ সকল পণ্যের মূল্য যে হারে বেড়েছে সে হারে বাড়েনি প্রতিমার দাম। তার উপর এ বছরে করোনার অজুহাতে অনেকটাই কম প্রতিমার দাম। এবার বড় প্রতিমা ৩০-৪০ হাজার ও ছোট প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকায়। ফলে লাভ হবে না কারিগরদের, তারপরও ধর্মীয় আবেগ ও পেশার প্রতিশ্রুতির কারণে বছরের পর বছর প্রতিমা তৈরি করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
প্রতিমা কারিগর ধনপতি রায় নামের এক শিল্পী বলেন, ‘আমাগের খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। সকাল ৬ডা থেকে শুরু কইরে রাত পর্যন্ত কাজ করতি হচ্ছে। তবুও ভালো কিছু টাকা তো হবিনি।’
প্রতিটি পাড়াতেই তৈরি করা হচ্ছে একাধিক দুর্গা প্রতিমা। কারিগরেরা রাত-দিন প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করছে অর্ডার নেয়া প্রতিমা তৈরি শেষ করতে।
প্রতিমা কারিগর রিমি দাশ বলেন, এখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে কাজ করছে। দেবী মাকে সাজাতে শত ব্যস্ততায়ও যত্ন সহকারে কাজ করা হচ্ছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত কারিগরদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষদ গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।