দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে উৎপাদন বাড়লেও পাথর বিক্রির ধীর গতির কারণে মজুদ বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসে মধ্যপাড়া পাথরখনি থেকে মাসিক উৎপাদনের ইতিপূর্বের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে একটি নতুন মাসিক পাথর উত্তোলনের মাইলফলক রেকর্ড তৈরী করেছে জার্মাানীয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। পাথর খনির পরিচালনা,উৎপাদন এবং উন্নয়নে জিটিসি’এর সাথে ২য় দফা চুক্তির পর গত অক্টোবর মাসে প্রায় দেড় লক্ষ মেট্রিক টন মাসিক সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমানে পাথর উত্তোলন করেছে জিটিসি।
জানা যায়, গত ২০০৭ সালে পাথর খনির বাণিজ্যিক উত্তোলনের শুরু থেকে পেট্রোবাংলার মাসিক পাথর উত্তোলনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সকল মাসেই অধিক পরিমানে পাথর উত্তোলন করেই চলেছে জিটিসি।
এদিকে, খনি থেকে বর্তমানে মাসিক পাথর উত্তোলনের ধারাবাহিক এই রেকর্ড এর তুলনায় পাথর বিক্রি কম হওয়ার ফলে পাথর রাখার জায়গার অভাবে আবারো খনিটি বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। উত্তোলিত পাথর রাখার জায়গার অভাবে খনির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি এবং খনি বন্ধ হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাওয়ার পাশাপাাশি পাথর ব্যবসা এবং খনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও শ্রেনী পেশার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ৫ হাজার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে।
অপরদিকে, দিনাজপুরের মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উৎপাদন বাড়লেও নানা কারণে বিক্রি কমায় পাথরের মজুদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এবং কম দামে এই পাথর বিক্রি সত্তে¡ও মজুদ বেড়ে প্রায় ১০লাখ মেট্রিক টনের অধিক পৌচেছে। অথচ কিছু নিয়মনীতি মানা হলে দেশের একমাত্র পাথর খনিটি লাভজনক ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।
দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬লাখ মেট্রিক টন হলেও এর বেশিরভাগ আমদানি হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। অথচ দেশের বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নকাজে মধ্যপাড়া পাথরের ব্যবহার নির্দেশনা বাধ্যতামুলক করা হয় এবং আমদানিকৃত পাথরের উপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু কমানো হলে মধ্যপাড়া পাথরখনিটি লাভজনকে পরিণত হবে এমনটাাই বললেন খনি সংশ্লিষ্টরা।
তবে পূর্বের তুলনায় আবার পাথরের বিক্রি বাড়ছে এবং গত সেপ্টেম্বর মাসে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পাথর বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৮হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন। বিক্রি বাড়ার জন্য চেষ্টা করছে এবং বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। যাতে আশার আলো দেখছেন খনি সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় মধ্যপাড়া পাথর খনিটি ইতিপূর্বে ধারাবাহিক লোকসানে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পাথর খনিটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে গত ২০১৩ সালে জার্মাানীয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর সাথে খনি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা, রক্ষনাবেক্ষন,উৎপাদন এবং পরিচালনা চুক্তি হয়। জিটিসি খনির উন্নয়ন ও উৎপাদনকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করে এবং প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা, কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝেও জিটিসি গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর থেকে টানা ৫ অর্থবছরে খনিটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। যার ফলশ্রæতিতে পাথর উত্তোলনে জিটিসি’র এই সফলতার পর প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষে জিটিসি’র সাথে নতুন করে আবারো খনি কর্তৃপক্ষের ৬ বছরের জন্য চুক্তি হয়। দ্বিতীয় দফা চুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় বছরে নির্ধারিত সময়ে বাৎসরিক উত্তোলনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী পরিমান পাথর উত্তোলন করে জিটিসি তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।
খনি সুত্র জানায়, খনি কর্তৃপক্ষের আয়ত্বাধীন পাথর বিক্রয় অতিমাত্রায় ধীর গতিতে হওয়ার ফলশ্রæতিতে পাথর বিক্রি বাড়ছে না। বর্তমানে খনির বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০লক্ষ মেট্রিক টনের অধিক পাথর মজুদ রয়েছে।
মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন ও উন্নয়নের এই অবদান অব্যাহত রাখা এবং রেকর্ড পরিমানে পাথর উত্তোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে খনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা পেলে জার্মানীয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর মাধ্যমে মধ্যপাড়া পাথর খনি দেশের অর্থনীতির একটি মডেল হবে বলে খনি সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।