মনোজ রায় হিরু, আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি ঃ
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় যৌতুকের দাবিতে এক নববধূ’র মূখে বিষ ঢেলে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। হতভাগ্য ওই নববধূর নাম সবিতা রাণী। সে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ফুটকিবাড়ি ইউনিয়নের পাটশিরি গ্রামের ধর্ম বর্ম্মনের মেয়ে। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিন জনের নাম উল্লেখ্য করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন, উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের বড়সিংগিয়া গ্রামের জনৈক সুুরেন চন্দ্র বর্মনের দুই ছেলে যথাক্রমে সুমন চন্দ্র বর্ম্মন(স্বামী) ও ভাসুর মানব চন্দ্র বর্ম্মন এবং শ^াশুড়ী রুনি বালা রানী।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কয়েক বছর প্রেমের সম্পর্কের জেরে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ২২(১)(ক) অনুযায়ী উভয় পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় সুমন-সবিতা দম্পতির। মেয়ের সুখের কথা ভেবে বাবা ধর্ম বর্ম্মন ছয় লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে রাজী হন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই স্বামীর বাড়িতে সবিতার উপর নানা নির্যাতন ও নিপিড়ন শুরু হয়। এমনকি স্বামীর সাথে সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। স্বামীসহ তার শ^শুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য আরো পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে সবসময়ই অকারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো। বাবার আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে সব অত্যাচার নির্যাতন সবিতা মুখ বুজে সহ্য করত। এ প্রতিনিধিকে সবিতা জানায়, সর্বশেষ গত ৩ জুন সকাল থেকেই তার স্বামী, শশুর-শ্বাশুরি ও ভাসুর বিভিন্ন ধরনের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমি এর প্রতিউত্তরও করিনি। দুপুর বেলায় বাসায় কাজ করার সময় যৌতুকের অতিরিক্ত পাঁচ লক্ষ টাকা আনব কিনা এই অজুহাতে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। একসময় আমার তলপেটে লাথি মারলে তৎক্ষনাৎ আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর তারা আমার মুখে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। যেন সকলে বুঝতে পারে আমি বিষ পানে আত্মহত্যা করেছি। এ বিষয়ে সরেজমিন খোঁজ নিতে সবিতার শ^শুরবাড়ি গিয়ে মামলায় অভিযুক্ত কারোর দেখা মিলেনি। তবে অনেক সময় পর শ^শুর সুরেন চন্দ্রের দেখা পাওয়া যায়। তিনি জানান, আমার ছেলেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে বৌমার বাড়ির লোকজন জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের সময় এক লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়েছেন এবং তার বৌমা স্বেচ্ছায় বিষ পান করেছেন।
মামলা সম্পর্কে আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: সোহেল রানা জানান, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে আটোয়ারী থানায় প্রেরণ করেছেন। আমরা তদন্ত করছি, তবে এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।#