বীরগঞ্জ, দিনাজপুর থেকে বিকাশ ঘোষ : জ্বলন্ত প্রদীপের মত আলো ছড়িয়ে নিজেকে বিলাতে চাই। ৬৬ বছরের বয়স্ক একজন বৃদ্ধা, যার কর্ম দক্ষতা, উদ্দীপনা, মানব সেবায় আগ্রহ যে কোন তরুণকেও হার মানায়। এই তরুণ, কর্মপাগল, উদ্দ্যোমী,পরোপকারী, মানবপ্রেমিক স্বল্প সংখ্যক মানুষ আছেন যারা নিজেদের পাশাপাশি অন্যের মঙ্গল কামনায় আত্না নিয়োগ করেন। তরুণ্যের প্রতীক এই প্রবীণ মানুষটি লোকালয় থেকে অনেক দুরে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সুস্থ থাকার যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন তা সবার সবসময় সম্ভব হয়ে উঠে না। তার মানব সেবার প্রতিষ্ঠানিক রূপ বিবি কাঞ্চন চক্ষু হাসপাতাল প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে ডাক্তার হয়েছেন মাটি ও মানুষের সেবা করার জন্য। চিকিৎসার জন্য গ্রামের মানুষদের আর শহরে যেতে হয় না উল্টা শহরের মানুষেরাই এখন চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন বিবি কাঞ্চন চক্ষু হাসপাতালে। ছোট বেলা থেকেই মানব সেবার এ স্বপ্ন দেখতেন। মনে স্বপ্ন, বুকে সাহস এবং মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সফল চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। উপজেলার ১০ নং মোহনপুর ইউনিয়নের ভগিরপাড়া গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের মৃত আলহাজ্ব আব্দুল গফুর কাঞ্চন বিবি’র পুত্র এম এ লতিফ তিনি চাকুরীকালীন সময়ে অনুভব করেন, বিপুল অর্থ ব্যয়ে করে গ্রামের মানুষগুলো চক্ষু চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে সীমাহীন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কিন্তু সুচিকিৎসা পান না। এটা তার মনকে ব্যথিত করে। গ্রামের মানুষের ভোগান্তি আর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন তাকে গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য করেছে। গ্রামে এসে মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু করেন। প্রথমে প্রত্যেক শুক্রবার নিজ গ্রামের চক্ষু রোগিদের পরামর্শ দিতে শুরু করেন। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এলাকাবাসীর অনুরোধ এবং মাটির টানে গ্রামেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অত:পর মায়ের নির্দেশে ২০০১ সালের ১জুন নিজস্ব জমির উপর একটি হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মায়ের নামানুসারে হাসপাতালের নামকরণ করা হয় বিবি কাঞ্চন চক্ষু হাসপাতাল। মায়ের মৃত্যুর পর নিজেকে উৎসাহিত করলেন স্বপ্ন বাস্তবায়নে। কয়েক বছরের মধ্যেই পুর্নাঙ্গ আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত হয়। বিবি কাঞ্চন চক্ষু হাসাপাতাল। কারো কাছে সাহায্যর হাত না বাড়ালেও কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাওয়ার পথে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ লতিফ জানান, ১৯৫৩ সালের ২৮ মার্চ জন্মগ্রহ করেন তিনি। পিতা- মৃত আলহাজ্ব আব্দুল গফুর পেশায় একজন কৃষক এবং মাতা মৃত কাঞ্চন বিবি একজন আদর্শ গৃহিণী ছিলেন। পিতা- মাতার ৬ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। গ্রামের স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পঞ্চম শ্রেণিতে তৎকালীন বোচাগঞ্জ সার্কেলের চার থানার মধ্যে একমাত্র ছাত্র হিসেবে এবং অষ্টম শ্রেণিতে বৃহত্তম দিনাজপুরে ট্যালেন্ট ফুল বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে খানসামার মাইনর উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসিতে এবং ১৯৭০ সালে রাজশাহী সরকারী কলজ থেকে এইচএসসিতে প্রথম বিভাগে উর্ত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে কর্ম জীবন শুরু করেন তিনি। এমবিবিএস পাশ করে ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে কর্ম জীবন শুরুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১০ বছর ইরান এবং ইরাকে চাকুরী করেন। দেশে ফিরে এসে ঢাকায় ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জেন এবং প্রশিক্ষক হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ লতিফ জানান, মাত্র ২০ টাকা টিকিটে চিকিৎসা নিতে পারবে যে কেউ। তবে দারিতদ্রদের জন্য ফ্রি ব্যবস্থা ও রয়েছে। সারফেস টাইলিং করা শীততাপ নিয়ন্ত্রত অপারেশন থিয়েটারসহ সেপটিক এবং মাইনর অপারেশন থিয়েটার গড়ে তোলা হয়েছে। সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজ যন্ত্রপাতি। বাবার নামে আধুনিক সেমিনার কক্ষ,প্রায় ৬ শতাধিক বই নিয়ে একটি লাইব্রেরী, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য একটি পুকুর, হাসপাতাল চত্বরে দেশি- বিদেশী ফল ও ঔষধি গাছ। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি হাসপাতালের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থী ও গুণী ব্যক্তিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বর্তমানে ৪ জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ কর্মরত আছেন। এব্যাপারে,ডা: এম এ লতিফ তিনি জানান, এ অঞ্চলের জন্য আমেরিকা – বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনাজপুর ক্যাম্পাস আমার এই হাসপাতাল এলাকায় শীঘ্রই গড়ে তোলা হবে। বীরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামটি এখন স্বাস্থ্য পল্লী হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। চিকিৎসা জন্য গ্রামের মানুষদের আর শহরে যেতে হয় না উল্টা শহরের মানুষেরাই এখন চিকিৎসা নিতে আসে বিবি কাঞ্চন চক্ষু হাসপাতালে। আর বিবি কাঞ্চন হাসপাতালে সাদা মনের মানুষদের মহান কর্মের প্রতীক হয়ে মাথা উচু করে জানান দিচ্ছে, ভালো কাজের মাঝে ভাল মানুষেরা অমর হয়ে থাকে।