পঞ্চগড়\ বিদায় বেলায় দেশের শীত মৌসূম। আবহাওয়াবিদদের মতে মাঘের ১৮ তারিখ পর্যন্ত থাকে শীতের তীব্রতা। এরপর ধীরে ধীরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদায় নেয় শীতকাল। কিন্তু মৌসূমের শেষে এসেও শৈত্যপ্রবাহ চলছে উত্তরের শীতের জেলা বলে খ্যাত পঞ্চগড়ে। গত দুই দিন ধরে সেখানে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে ৯-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের হিসেবে যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। এর আগের দিনও দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মত ঝরছে ঘন কুয়াশা। এতে ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় সকালে ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সূর্যের দেখা মিলছে অনেক দেরিতে। আর দিনভর কুয়াশা অব্যাহত থাকায় সূর্যের উষ্ণতাও ছড়াচ্ছে কম। এতে করে দিনের বেলাতেও শীত অনুভ‚ত হচ্ছে।
দিনপঞ্জি অনুযায়ী পৌষ-মাঘ শীতকাল। কিন্তু হিমালয়ের অনেক কাছে অবস্থান হওয়ায় উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে শীতের আগমন হয় কার্তিকেই। আর শীত শেষ হয় মাঘের শেষে। শীতের জেলা পঞ্চগড়ে বছরের ১২ মাসের মধ্যে শীত থাকে প্রায় চার মাসেই। এই শীত শুরুর দিকে উপভোগের হলেও ধীরে ধীরে তা দূর্ভোগের কারণ হয়ে দেখা দেয়। মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার সাথে হিমালয় থেকে আসা কনকনে শীতল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়ে পঞ্চগড়ের মানুষ। তবে স্থানীয়দের মতে আগের মত ডুডুহা (কয়েকদিন ধরে সূর্যের মূখ দেখা না যাওয়া) এখন আর নাই। বাড়ির ভেতরে বাঁশের মুড়া ও কাঠ দিয়ে একদিন আগুন জ্বালালে সেই আগুন চলত সপ্তাহ ধরেই। রাতের বেলা শীত থেকে নিজেদের উষ্ণ রাখতে অনেকে আবার মাটির পাত্রে আগুনের কয়লা দিয়ে রেখে দিত চৌকি বা খাটের নিচে। তেমনটা এখন আর নজরে আসছে না। গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে কমছে শীতের তীব্রতা। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে চার মাসের শীতের এক তৃতিয়াংশই দূর্ভোগের চেয়ে উপভোগেরই থাকে-এমনটাই বলছেন বৃদ্ধরা। মাত্র কয়েকদিনের জন্য সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নেমে গেলেও দিনের ঝলমলে কড়া রোদে উধাও হয়ে যায় শীত। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা কমে গিয়ে টানা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও এই অঞ্চলের দূর্ভোগ আগের মত নাই। কারন রাতের তাপমাত্রা কমে গেলে তীব্র শীত অনুভ‚ত হলেও দিনের কড়া রোদে আর দূর্ভোগ থাকে না।
এ নিয়ে কথা হয় পঞ্চগড় জেলা সদরের মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতাউর রহমানের সাথে। তিনি জানান, আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখনকার শীত এখন হলে শিক্ষার্থীরা আর স্কুলেই যেত না। টানা ৮-১০ দিন ধরে সূযের মূখ দেখাই যেত না। সেই সাথে উত্তর দিকে থেকে আসত হু হু করে হিম বাতাস। প্রতিটি বাড়িতে তখন ছিল ‘ফায়ার প্লেস’ বা আগুন তাপানোর ব্যবস্থা। আমরা আগে থেকেই বাঁশের মুড়া সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে রাখতাম। সেইসাথে থাকত ‘ঘসি’ বা কাঁচা গোবর শুকিয়ে রাখা। বাঁশের মুড়া আর ঘসি দিয়ে একদিন আগুন জ্বালাতে তা চলত সপ্তাহ ধরে। সূর্যের মূখ না দেখা যাওয়া পযন্ত এই আগুন নেভানো হত না। জরুরী কাজ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে যেত না। কিন্তু সেই শীত এখন আর নেই। প্রতি বছর কমছে শীতের তীব্রতা। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা হলেও যেদিন সূর্যের মূখ দেখা যেত না সেদিনই বেশি শীত অনুভ‚ত হচ্ছে এখন। এ অবস্থা ২/৩ দিনের বেশি হয় না। আর সূর্যের দেখা মিললেই কড়া রোদে উধাও হয়ে যাচ্ছে শীত। আগামী বছরগুলোতেও মনে হয় ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা আরও কমে যাবে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক জীতেন্দ্র নাথ রায় জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত বুধবারও এখানে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমাদের হিসেবে পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে দুইদিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের আলো বেশি থাকায় বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও ২/১ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।