বুধবার , ১৯ মার্চ ২০২৫ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
মার্চ ১৯, ২০২৫ ১:৪০ অপরাহ্ণ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি\চারবছর আগে ৮৮২কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬কিলোমিটার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপদ (সওজ)। নির্মানের পর থেকে দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট হয়ে গাইবান্ধা জেলার গবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের প্রায় ৬৬ কিলোমিটারে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের চার বছর যেতে না যেতেই সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উচঁÑনিচু ঢেউ ও খাল, এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে হাজার হাজার যানবহন। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা।
দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ঢাকা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ চারমাথা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। এই মহাসড়ক নির্মাণের শুরুর দিকে এলাকার সাধারণ মানুষ ও পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু নির্মাণের দুই বছরের মাথায় সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে যাওয়া শুরু করে। কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু নিচু হয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। এসব কারণে মহাসড়কটি পথচারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর থেকে গবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ব্যাস্ততম আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে রাজধানী ঢাকাসহ রাজশাহী, বগুড়া,জয়পুরহাট,হিলি স্থলবন্দরসহ সারাদেশ থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়গামী সকল যানবহন ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে এসে গবিন্দগঞ্জ হয়ে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। সেইসাথে এই সড়ক দিয়েই দেশের একমাত্র মধ্যপাড়া কঠিন শীলা খনি,বড়পুকুুিরয়া কয়লা খনি এবং কয়লাভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্রে যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া দিনাজপুরের দক্ষিনাঞ্চল ফুলবাড়ী, বিরামপুর,নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাটের সাথে দিনাজপুর জেলা সদরে যাতায়াতের পথ এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি, ফলে এই মহাসড়কটি সবসময় থাকে ব্যস্থতম।
ট্রাক চালক মমিনুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি দেবে গিয়ে উচুঁনিচু নালা খালে পরিণত হওয়ায় প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নিচু স্থানে চাকা পড়লে নালা থেকে যানবহন সাইট দেয়া নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে, এতে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তখন দোষ হয় চালকের। তিনি বলেন, সড়কটি দ্রæত সংস্বকার করা দরকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আম্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, ল²ীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চন্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু নিচু ঢেউ হয়ে আছে। পিচঢালাই উঠে কোথাও কোথাও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
একই অবস্থা ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে পশ্চিম দিকে রাঙ্গামাটি হয়ে বারাইহাটের কিছু অংশ এবং আমবাড়ী যাওয়ার আগে একইভাবে দিনাজপুৃর পর্যন্ত।এতে মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী পরিবহন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, যত্রতত্র উঁচু হয়ে থাকায় এসব অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
দিনাজপুর কোতোয়ারীসহ ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানার সুত্রে জানাগেছে গত এক বছরে এই আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে ১১৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, এতে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়েছে ৪৫জনের। ২০২৪ সালের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র ফুলবাড়ীতে ২০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৪ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে ২৫ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত ৫ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এতে ৫জনই নিহত হয়েছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে,এই আঞ্চলিক মহাসড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৭-২০১৮অর্থ বছরে গবিন্দগঞ্জ থেকে দিনাজপুর ১০৬ কিলোমিটার ৪২ ফুট প্রস্তকরণে ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়। রাস্তাটি ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে ৮টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে নির্মান কাজ শুরু করে সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ করে। কিন্তু প্রশস্ত ও সংস্কারের কাজ শেষ করার দুই বছরের মাথায় আবারো রাস্তাটি দেবে গিয়ে উচুঁ-নিচু খাল খন্দে পরিনত হয়ে চলাচলের অনুপোগি হয়ে পড়ে।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই সড়কের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি থাকে। এর মধ্যে মহাসড়কে যেখানে সমস্যা হয়েছিল, আমরা সেসব স্থান সংস্কার করেছি। এখন চুক্তির সময় পার হয়েছে। আমাদের আর কাজ করার সুযোগ নেই।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদুৎ বন্দর জাতীয় রক্ষা কমিটি ফুলবাড়ী শাখার আহŸায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২০১৭-১৮ সালে সেই সময়ে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা ঠিকাদারের কাছে কমিশন বানিজ্য করেছে। সড়কের শতকরা ৬০ভাগ টাকা লুটপাট করে তাদের পকেট ভরেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজজ করে নি¤œমানের উপকরণ দ্বারা রাস্তাটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণ করে বরাদ্ধের অধিকাংশ টাকা লুটপাট করায় এখন রাস্তাটি দেবে গিয়ে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। তার খেসারত এখন আমাদের সাধারণ নাগরীকদের দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সড়ক নির্মানে যে অনিয়ম হয়েছে তা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য আন্তর্বর্তীকালিন সরকারে প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, অনেক সময় অভার লোড গাড়ী চলাচলের কারনে সড়কে এরকম হয়ে থাকে। এরপরেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থাকে। কাজ শেষে সড়ক সংস্কারে জন্য প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনবছর ডিপিএল (ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড) থাকে। এই সময়ে মহাসড়কে এ রকম কোনো সমস্যা থাকলে তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার করবে। এই সড়কটিতে ৮টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক ভাবে কাজ করেছে। অনেকেরই চুক্তি শেষে হয়েছে এবং কিছু জায়গায় চুক্তির সময় আছে। সরেজমিনে দেখে ঠিকাদেরর মাধ্যমে সেই জায়গা গুলো সংস্কারকাজ করা হবে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

তেঁতুলিয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ হাইওয়ের ওসি’র বিরুদ্ধে

রাণীশংকৈলে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে মা সমাবেশ পালিত

অরবিন্দ শিশু হাসপাতালের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল

বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে -মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি

বীরগঞ্জ ইমারত শ্রমিকদেরকে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির নেতার ঈদ সামগ্রী বিতরন

বীরগঞ্জে কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য বন্ধের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

হাবিপ্রবিতে “মাছচাষে আধুনিক প্রযুক্তি” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে গামছা পলাশ ও অংকনের ‘চান্দের কোলে’

সভাপতি-জয়নাল : মখদুম সাব্বির-সম্পাদক ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন

দিনাজপুরে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদন্ড