আমন মৌসুমে চাল সরবরাহে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায়, শর্ত ভঙ্গের কারনে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী দিনাজপুর জেলার ২৯৬টি চালকল মিলের নিবন্ধন বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গত ১৬ এপ্রিল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী সাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইডে নিবন্ধন বাতিলকৃত চালকলের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে আমন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় লোকসানের ভয়ে সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি বলে জানায় একাধিক চালকল মালিক। একাধিকবার তাগিদ দিয়েও তাদের চুক্তির আওতায় আনা যায়নি বলে জানায় খাদ্য বিভাগ।
আপৎকালীন মজুত গড়তে গতবছরের ১৭নভেম্বর আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়ে গত ২৮ ফেব্রæয়ারি সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। সরকার আমন মৌসুমে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য ৩৩টাকা কেজি দরে ধান, ৪৭টাকা কেজিতে সিদ্ধ চাল এবং ৪৬টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার দর নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি ছিল।যে কারণে কৃষক শুরু থেকেই খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনাগ্রহী ছিলেন।
খয়েরবাড়ী গ্রামের কৃষক শাহিনুর ইসলাম বলেন, গুদামে ধান দিতে গেলে ঝামেলা পোহাতে হয়। এবার সরকারি গুদামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি। তাই উৎপাদককৃত সব ধান বাজারে বিক্রি করেছি।
অপরদিকে শিবনগর ইউপির মেসার্স আফতার হাসকিং মিলের স্বত্বাধিকারী আফতার আলী বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে ৫০টাকার বেশি খরচ হয়। শুধুমাত্র চুক্তি থাকার কারনে লোকসান দিয়ে খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। সরকার চাইলে প্রণোদনার মাধ্যমে এই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে পারেন।
চুক্তির বাইরে থাকা শাহ হাসকিং মিলের সত্বাধীকারি আব্দুল কাইয়ুম শাহ বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারেই চালের দাম বেশি। তাই আমি চুক্তি করিনি।
ফুলবাড়ীর হাসান রাইস এন্ড ফ্লাওয়ার মিল এর সত্বাধীকারী ও উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল হক মÐল বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে চালের দাম অনেক বেশি ছিল।তাই আনেকে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। আমি প্রতিবছরই চাল সরবারহ করি। তবে এবছর অসুস্থতার কারনে চুক্তিবদ্ধ হতে পারিনি। এবিষয়ে আমার চিকিৎসাজনিত প্রমানপত্র খাদ্য বিভাগে জমা দিয়ে ছিলাম এরপরও নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, এটি খুবই দু:খজনক।
ফুলবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে সিদ্ধ চাল ৩ হাজার ২৫৮ দশমিক ৩৩০টন, আতপ চাল ৭৯৫টন এবং ১ হাজার ২৫৮টন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১টন। ফুলবাড়ী উপজেলার ৯৯টি নিবন্ধিত চালকলের মধ্যে খাদ্য বিভাগের নিবন্ধন রক্ষায় ৫৯টি চালকলের মালিকরা গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহম্মেদ বলেন, আমন মৌসুমে উপজেলার ৪০টি চালকল মিল মালিক চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেননি। শর্ত ভঙ্গ করায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এসব চালকল মিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইডে অফিস আদেশে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শিঘ্রই জেলা থেকে চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।