স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় ভুট্টা চাষ দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষকদের এনে দিয়েছে নতুন গতি। সফলতার স্বপ্ন বুনছেন ভুট্টা চাষীরা। ভুট্টার ক্ষেতে লকলকে সবুজ পাতার ফাঁকে এখন ফুল ও ভুট্টার মোচা। বিস্তীর্ণ মাঠে দৃষ্টি পড়লেই চোখে পড়বে শুধু ভুট্টা আর ভ‚ট্টার খেত। জমিতে ভালো ফলন দেখে খুশি কৃষকও। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলনও হয়েছে। ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল এসব কৃষি জমিতে ভুট্টা চাষ এনে দিয়েছে নতুন গতি। ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন নতুন নতুন চাষিরা। কৃষকদের জীবন-জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে কৃষির এই সফল বিবর্তন। আবার ভ্ট্টুা আবাদের সাথে সাথী ফসল চাষেও বাড়তি আয় হচ্ছে চাষীরা।
এখন কোথাও আগাম জাতের ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ চলছে। আবার কোথাও বিলম্বে বীজ রোপণ করায় ভুট্টা ক্ষেতে সেচ ও পরিচর্চা করছেন কৃষক।
কৃষকরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম, ঝুঁকিহীন, লাভজনক, স্বল্প পরিশ্রমে বেশি ফসল, অল্প সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা রয়েছে। ভুট্টা মানুষের জন্য যেমন পুষ্টিকর তেমনি এটি পোল্ট্রি ও মাছের খাবারসহ বিভিন্ন খাবারে যুক্ত হওয়ায় বাজারে বেড়েছে চাহিদা। গবাদি পশুর খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার বেশি হওয়ায় সারাবছর এর চাহিদাও থাকে। এছাড়াও ভুট্টা গাছের পাতা গবাদি পশুর খাদ্য ও গাছ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
খানসামার পাকেরহাট গ্রামের নিপ্পন রায় বলেন, দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। দামও ভালো পাওয়া যায়। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৩৫-৪০মণ।
চিরিরবন্দরের দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কৃষক ফজলে রাব্বী বলেন,এবছর ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। হালচাষ, সেচ, সার, বীজ, নিড়ানী, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিসহ প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয়েছে অন্তত ২০-২৫হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা কমপক্ষে ৬০-৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। একই গ্রামের শমসের আলী বলেন, ভুট্টা আবাদের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মরিচসহ শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি লাভ পাওয়া যায়।
অমরপুর ইউপির বানিয়াপাড়ার নির্মল রায় বলেন, এবছর ৫বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করছি আশানুরুপ ফলন পাব। বর্তমানে ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র আসায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ভুট্টা সহজেই মাড়াই করে বাজারজাত করতে পারছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, গতবছর উপজেলায় আশানুরুপ ভুট্টার ফলন হয়েছিল। লাভজনক হওয়ায় এবছর ভুট্টার আবাদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মৌসুমে চিরিরবন্দরে ৩ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৩ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমি। কিন্তু ভুট্টার আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৫০হেক্টর জমিতে। প্রতিবছরই ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।