দিনাজপুরের নামমাত্র মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৭০০টাকা পর্যন্ত। অনেকে ছাগলের চামড়ার দাম না পেয়ে নদীসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলছেন। তবে জেলায় কয়েকজন কিছু ছাগলের চামড়া কিনেছেন। ফুলবাড়ীতে একটি চামড়া এক কাপ চায়ের দামে অর্থ্যাৎ ৫-১০টাকায় কিনেছে।
অন্যদিকে,দিনাজপুরের রামনগরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে রাস্তার ধারে ফেলে যান। এতে রামনগর বাজার এলাকার রাস্তার দুই ধারে চামড়ার স্তূপ হয়ে যায়। রামনগর বাজার এলাকা কাঁচা চামড়ার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের পর তৃতীয় দিন সোমবার পৌরসভার গাড়ীতে এসব পড়ে থাকা চামড়া তুলে নিয়ে রাস্তা পরিস্কার করে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন দিনাজপুরের চামড়া বাজার রামনগরে, ফুলবাড়ীর নিমতলা মোড়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসছে লোকজন। কাঙ্খিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়েছেন ক্রেতারা। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, সবধরনের পশুর চামড়া কেনা হলেও খরচ বেশী হওয়ায় ছাগলের চামড়া কেউ কিনতে চায় না। কারন স্বরুপ তারা বলছেন-একটি ছাগলের চামড়ায় সংরক্ষনে লবন ও শ্রমিক খরচ পরে ৫৫টাকা।লবনের মুল্য হিসাব না করে চামড়া কিনলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়।
চামড়া বিক্রি করতে আসা আহসান হাবিব বলেন, সরকার একটি দাম নির্ধারণ করে দিলেও সরকারের দাম শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। চামড়ার বাজার আগেও যা ছিল এবারও তাই আছে। একটি গরুর চামড়া আর একটি ছাগলের চামড়া এনেছিলাম। গরুর চামড়া বিক্রি করলেও ছাগলের চামড়ার দাম নেই, তাই নদীতে ফেলেছি।
চামড়া ব্যবসায়ী কোরবান আলী ট্যানারির মালিকদের দোষারোপ করে বলেন, তারা সরকারি দামে না কেনায় আমরাও কিনতে পারছি না। আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় চামড়া কিনছি। ছাগলের চামড়া নিচ্ছি ১০টাকায়। ট্যানারির মালিকেরা ছাগলের চামড়া নিতে চায় না। এ জন্য দাম নেই। অন্য দিকে কোরবানি উপলক্ষে বেড়েছে লবণের দাম। আগে প্রতি মণ লবণ ৪৭০ টাকা থাকলেও এখন কিনতে হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। তিনি আরও জানান, গত বছর সরকারি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছিলেন। অনেক চামড়া নদীতে ফেলে দিতে হয়েছে। তাই এবার ২০০ গরুর চামড়া কিনেছেন।
দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রæপের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকারী মুল্য অনুযায়ী কিনে লবন,শ্রমিক খরচসহ সংরক্ষন করে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি গরুর চামড়ায় খরচ হয় ২৫০ থেকে ৩০০টাকা। লবনের দাম বেশী, শ্রমিক খরচও বেশী এরপরেও ট্যানারীদের কাছে চামড়া বিক্রির পর টাকা থাকে বকেয়া।দিন দিন তাই এ ব্যবসায় ধস নামছে। ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রæপের আহবায়ক আকতার আজিজ বলেন, ট্যানারীদের কাছে পূর্বের পাওনা বাদে গত ঈদ থেকে আজ এ ঈদের পূর্ব পর্যন্ত ২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়ী রয়েছেন মাত্র ২০জন। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি, যাতে চামড়া শিল্পের গৌরব ফিরে আসে।