শনিবার , ১০ এপ্রিল ২০২১ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীমার কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ম্যানেজার

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
এপ্রিল ১০, ২০২১ ৮:২৭ অপরাহ্ণ

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ইনস্যুনেন্সে টাকা জমানোর কথা বলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা রয়েছেন সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী পীরগঞ্জ শাখার ম্যানেজার বিরেন্দ্রনাথ রায়।
এই বীমা কোম্পানীর পীরগঞ্জ শাখা অফিস খোলা থাকলেও প্রায় এক বছর ধরে লাপাত্তা রয়েছেন তিনি। মেয়াদ পূর্তি শেষে বার বার ধর্না দিয়েও জমা অর্থ ফেরৎ পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ গ্রাহকদের। উপায়ন্তর না পেয়ে এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভূক্তভোগী গ্রাহক।
অভিযোগে জানা যায়, প্রায় পনের বছর আগে পৌরশহরের রঘুনাথপুর এলাকায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ গণমূখী বীমা প্রকল্প নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন উপজেলার সাটিয়া গ্রামের বাঞ্জারাম রায়ের ছেলে ও নারায়নপুর দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বীরেন্দ্র নাথ রায়।
মেয়াদ শেষে জমা অর্থের চেয়ে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাসিক কিস্তিতে দুইশ, পাঁচশ, এক হাজার টাকা হারে প্রায় পনের বছর ধরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৭ শতাধিক গ্রাহকের কাছ টাকা প্রাপ্তি রশিদ ধরিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছেন তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ শতাধিক গ্রাহকের ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ ৩ বছর আগেই শেষে হয়েছে। মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ জমানো অর্থ ফেরৎ নিতে গেলে গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন টালাবাহান শুরু করেন তিনি। জমানো অর্থ ফেরত পেতে ওই শাখা অফিসে বার বার ঘুরেও হয়রানী হয়েছেন বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। কিন্তু গ্রাহকের টাকা ফেরত না দিয়ে প্রায় এক বছর ধরে লাপাত্তা রয়েছেন বীরেন্দ্রনাথ রায়। কষ্টের জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন প্রায় সাত শতাধিক গ্রাহক।
ফকিরগঞ্জ এলাকার ষাটোর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধা আকলিমা বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমি গরীব মানুষ বুড়ো বয়সে ভালো ভাবে চলার জন্য ওইখানে টাকা জমিয়েছি। টাকা জমানোর মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তিন বছর ধরে ঘুরছি কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। ম্যানেজারকেও পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ঔষুধ কেনার টাকা নেই, এখন আমি কি করবো।
এমন অভিযোগে উপজেলার ভাকুড়া গ্রামের মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লাভলী বেগমের। তিনি বলেন, সানলাইফ ইনসিওরেন্সে লাভের আশায় পাঁচশত টাকা হারে মাসিক কিস্তিতে ১০ বছর মেয়াদে ৬০ হাজার টাকা জমা করেছি। লভ্যাংশসহ এক লাখ টাকা পাওয়ার কথা। তিন বছর আগে ইনসিওরেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। লাভ তো দুরের থাক একন জমানো টাকাই ফেরত পাচ্ছি না। তিনি আরো জানান তার এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাহক তার মতই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
পৌর শহরের মুন্সিপাড়া আজিজুল হক অভিযোগ করে বলেন, বীরেন্দ্রনাথ রায় একজন শিক্ষক মানুষ। তাকে বিশ্বাস করে ওই প্রতিষ্ঠানে মাসিক সাড়ে তিনশত টাকা হারে পাঁচ বছর মেয়াদে টাকা জমা করেছি। ২০২০ সালের জুন মাসেই আমার ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার টাকা পাচ্ছিনা।

এ ব্যাপারে বীরন্দ্রেনাথ রায়রে সাথে যোগাযোগরে চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি বার বার চেষ্টা করেও তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। অবশেষে তার গ্রামের বাড়িতে গেলে সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তের জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও