ঠাকুরগাঁও : মহামারীর অদৃশ্য শক্তি এবং চরন্তন অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রত্যয় নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ঘরেয়া পরিবেশে পালিত হলো করোনাকালের বাংলা বর্ষবরণ।
অন্ধকারের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর চিরন্তন লড়াইয়ের প্রধান শক্তি ইতিহাস ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির আলো। করোনার ভয়াল গ্রাসে ঘর থেকে বেরুতে না পারলেও প্রাণের আবেগে যেন জাগ্রত সবাই। ঘরে বসেই সবাই জানিয়ে দিল মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাঙ্গালী আপোষহীন। গত ২২ বছর ধরে ঠাকুরগাঁও শহরের জজকোট বটমূলে নিক্কন সঙ্গীত বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভাতীর আয়োজন করছে। এছাড়াও আল্পনা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠী সাধারণ পাঠাগার চত্বরে আয়োজন করতো ৭দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলা। শুধু তাই নয়, পহেলা বৈশাখের প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সামাজিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির কর্মীরা। ঢাকঢোল, রং মাখামাখী, নানান ধরণের ফেস্টুন ও মুখোশ পরিয়ে বের হতো শোভাযাত্রা। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। লকডাউন আর সরবারের আরোপিত বিধি নিষেধে ঘর বন্দি মানুষ। এর মধ্যেও বসে নেই সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এবার সাংস্কৃতিক শিল্পীরা ঘরে থেকেই গাইলেন গান, পাঠ করলেন কবিতা আর পরিবেশন করলেন যান্ত্রিক সঙ্গীত।
আর ঘরবন্দি হয়ে সনাতন ধর্মালম্বীরাও পুজাপার্বণের মধ্যে দিয়ে বরণ করে নেয় পহেলা বৈশাখ।
পহেলা পার্বনের সেই চিয়ায়িত রুপ করোনা ভাইরাসের থাবায় যেন কিছুটা ¤øান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর মনোতোষ কুমার দে।
তিনি আরো বলেন, করোনার থাবার পরেও মানুষের পরষ্পর পরষ্পরের যোগাযোগ কিন্তু রয়ে গেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। কেউবা সামাজিক যোগাযোগে, কেউবা মুঠোফোনের এসএমএসে। আর কেউ কেউ মেতে উঠেছে অনলাইনে। মনতোষ কুমার দের মতে এবার ঘরোয়া পরিবেশে উদযাপিত হলো বাংলার পহেলা উৎসব। এবার যেন উৎসব ঘরে ঘরে মেতে উঠেছে সবাই। জাগ্রত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।
তিনি আরো মনে করেন, বাংলার এই উৎসব দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে, নতুন আঙ্গীকে, নতুন সাজে। বিভিন্ন সময় বারবার বাঙ্গালীয়ানার উৎসব বাঁধার মুখে পরলেও কখনো কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। প্রস্ফুটিত হয়েছে ভিন্ন আঙ্গীকে, ভিন্ন রুপে।
কথা হয় নিক্কন সঙ্গীত বিদ্যালয়ের সঙ্গীত শিক্ষক দিপংকর বোস পিয়ালের সাথে। তিনি বলেন এবার অনলাইনের মাধ্যমে এই উৎসব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে ঘরোয়া পরিবেশে। আগামীতে করোনাকে জয় করে আবারো বেরিয়ে আসবে মানুষ, মিলিত হবে প্রাণের উৎসবে এমন প্রত্যাশা ও প্রার্থনা করা হয়েছে বলে জানান সঙ্গীত শিক্ষক দিপংকর বোস পিয়াল।