বিকাশ ঘোষ ,বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের বীরগঞ্জে হরিজনদের গৃহহীন ও ছিন্নমূলের মত মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের দিকে দেখার কি কেউ আছে ?দেশের গরীব, হতদরিদ্র ছিন্নমুল মানুষেরা জীবনেও কোনদিন কল্পনাও করে নাই পাকা ঘরসহ জমির মালিক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা সত্যি ঘটিয়ে “মানবতার মা” মমতাময়ী মা হয়ে গেলেন বিশ্ব জুড়ে। যা কোনদিন ভুলার নয়। দৃশ্যমান, মানবকল্যানে অন্যতম নিদর্শন, ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লিখা থাকবে। জনদরদি এমন মায়ে’র দৃষ্টান্ত বিরল। সরকারের আরও উল্লেখযোগ্য মানবিক কল্যানকর প্রকল্পের মধ্যে ভিক্ষুক পুর্নবাসন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাগ্য উন্নয়ন, আদিবাসীদের উন্নয়নসহ নানান প্রকল্প করে তাদের পাশে দাড়িয়েছেন। সে দিক থেকে বীরগঞ্জের হরিজনেরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে।বীরগঞ্জ পৌর শহরে ছিন্নমুলদের মত বসবাসকারীদের হরিজনদের সংবাদ সংগ্রহ করতে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, শহরের অভ্যন্তরে ৪নং ওয়ার্ডে সহকারী কমিশনার ভুমি অফিসের অদূরে নদীর পাড়ে যত্রতত্র নোংরা ছিন্নমূল পরিবেশে বসবাস করছে হরিজন সম্প্রদায়ের ১৪/১৫ টি পরিবারের প্রায় ১০০ জন মানুষ।তাদের এক হরিজন নেতা বীরগঞ্জবাসীর তৎকালীন সময়ের ঘর ঘর মানুষের চেনামুখ মেথর, সুইপার তথা হরিজন খুদিয়া’র বংশধর ও ছেলে রংলাল। সেও এখন বয়সের ভারে নুয়ে গেছে। অনেকটা অচল অবস্থায় শুয়ে শুয়ে বলছে-বাবু আমরাই নগরের সমস্ত ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করি, আর আমরা বসবাস করি ময়লার ভাগারে। সব মানুষ পুর্নবাসিত হবে আর হরিজনেরা সারা জীবন ময়লার ভাগারে জীবনযাপন করবে? সম্প্রতি আমাদের বিশু নামীয় একজন অশান্তির কারনে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। খুদিয়ার ছেলে ছবিলাল, সূর্যহরির ছেলে দিলিপ, রঘুনাথের ছেলে মানিক সহ ঐ সম্প্রদায়ের সকলে একযোগে দুঃখ ভরাক্রান্ত কন্ঠে বলেন, আমরা সমাজে অবহেলিত, কেউ দেখার নাই, আমারাও সবাই এই পৌরসভার ভোটার ও বাসিন্দা। আমাদে নিজের কোন জমাজমি নাই। চলমান মুজিব জম্মশত বার্ষিকীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র প্রতিশ্রুতি ২০২১ সালের পর বাংলাদেশে কোন ছিন্নমুল, গৃহহীন, ভুমিহীন নামে মানুষ থাকবে না। তাই তো তিনি “মানবতার মা” হিসাবে পরিচিত।রনজিতের স্ত্রী কাজলী জানায়, দিনরাত সেবা তথা ঝাড়ু দিয়ে শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমুহ যেমন উপজোলা ক্যাম্পাস, ভুমি অফিস, থানা, পৌরভবন, হাসপাতালসহ সকল সরকারী দপ্তরগুলো স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে আমরাই দায়িত্ব পালন করি অথচ আমরা কাওরো নজরে নাই, এটি দুঃখজনক, মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। সরকার যখন জাতিভেদ বৈষম্য নিরঃসনে কাজ করছে, সেখানে আমাদের এমন দুর্দশা দেখার কেউ কি নাই? ‘মানবতার মা’ আপনার সুদৃষ্টি চাই আমরা।সূর্যহরির ছেলে শিবকুমার দিনাজপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের উদ্দেশ্যে বলেন, বীরগঞ্জে কি আপনার লোকজন নাই? তারা কি আমাদের দূর্দশা, মানবেতর পরিস্থিতি দেখেন নাই, জানেন না? আমরা নিম্নমানের জীবন প্রবাহ করি, তারপরেও মানুষ! পেশার কারনে আমরা মদ্যপপায়ী, স্বল্পায়ু বিশিষ্ট মানুষ, অন্যন্যদের মতই পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে বাস করতে চাই। ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুক্তার হোসেন জানায়, মেথর, সুইপার, ঝাড়ুদার নাম পাল্টিয়ে ১৯৪১ সালে হরিজন নামকরন করে জাতি বৈষম দুরীকরনে এ সম্প্রদায়ের মানুষকে মুলধারার জাতিস্বত্ত্বায় একাত্ম করার জন্য ‘হরিজন’ নামকরন করা হয়। তাদের একটি শক্তিশালী সমিতি রয়েছে। বীরগঞ্জের হরিজনদের দাবী তাদের একটি হরিজন পল্লী অবিলম্বে তৈরী করে দেয়া হউক।পৌর আ’লীগ সাধারন সম্পাদক প্রভাষক রফিকুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সারাদেশে অসংখ্য ভুমিহীন ও গৃহহীন মানুষের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে জমিসহ পাকা বাড়ি দিয়ে পুর্নবাসিত করেছে। যা সারাবিশ্বে প্রশংসিত, তাতে সন্দেহ নাই। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী’র গৃহিত এমন পদক্ষেপকে দেশবাসী আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সানাউল্লাহ’র সাথে কথা হলে তারা জানান, হরিজনর সম্প্রদায়ের মানুষেরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাদেরকে অবহেলিত রাখার সুযোগ নাই। সরকারী বিধি মেনে তাদেরকেও পুর্নবাসিত করা হবে।বিষয়টি নিয়ে বীরগঞ্জের পৌর মেয়র মোঃ মোশারফ হোসেন বাবুলের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, হরিজনদের দাবী যৌক্তিক, তাদের পুর্নবাসন করা অতি জরুরী। আমি মাননীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল মহোদয়, দিনাজপুর-১ ও প্রশাসনের সাথে পরামর্শ করে অবিলম্বে খুদিরামের নামে নাম করন করে বীরগঞ্জে একটি “খুদিয়া হরিজন পল্লী” নির্মাণের প্রস্তাবনা প্রেরনসহ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করব।
শুক্রবার , ৯ জুলাই ২০২১ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
