ইতিহাস ও পর্যটনসমৃদ্ধ হিমালয়কন্যা খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা। এ উপজেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। কালের বিবর্তনে এদের সংখ্যা বিলীন হয়ে আসছে। ঠিক এই সময়ে মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবনমান উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। তারই ধারাবাহিকতায় প্রকৃতির মায়াময় দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে গড়ে উঠছে নৃগোষ্ঠীদের জন্য আদিবাসী পল্লি। খরস্রোতা নদী ডাহুকের তীরবর্তী স্থান ও চারপাশে বিস্তীর্ণ সবুজে ঘেরা চা বাগানের মধ্যস্থলের এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় সমতল ভূমিতে গড়ে উঠছে এই পল্লি। একদিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষগুলো পাচ্ছে বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা, অন্যদিকে এ পল্লি রূপ নিচ্ছে দর্শনীয় পর্যটনে।
এই আদিবাসী পল্লি গড়ে উঠছে দেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকায় ডাহুক নদীর তীরে। এই পল্লি গড়ে ওঠার মাধ্যমে এ জনপদের শতভাগ আদিবাসী পাচ্ছেন বসবাসের জন্য বাড়ি। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে উঠছে এই পল্লি। পর্যটন এবং আদিবাসী সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে এই গৃহায়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ১৮টি আদিবাসী পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁই হচ্ছে এই পল্লিতে।
জানা যায়, এখানকার আদিবাসীরা অধিকাংশই চা শ্রমিক। চা-বাগানের পাশে ঝুপড়ি তুলে বসবাস করতেন তারা। ছিল না নিজের বলতে বাড়িঘর। এ উপজেলায় ৮০টি আদিবাসী পরিবার রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬২টি পরিবারকে বাড়ি বরাদ্দ দিয়ে আশ্রয়ণ করা হয়েছে। বাকি ১৮টি আদিবাসী পরিবার এই আদিবাসী পল্লিতে পরিবার-পরিজনসহ বসবাস করবেন। এখানে সরকারি খরচে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি থাকবে বিদ্যুৎব্যবস্থা, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন। আদিবাসীদের ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য গড়ে তোলা হবে নান্দনিক উপাসনালয় ও পাঠাগার। শিশুদের জন্য গড়ে তোলা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। কর্মসংস্থানের জন্য তাদের কমিউনিটি ট্যুরিজমের আওতায় আনা হবে। প্রতিষ্ঠা করা হবে লোক জাদুঘর। পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হবে গোলঘর, উন্মুক্ত ব্রিজ ও থাকার ব্যবস্থা। পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য আদিবাসী সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ পরিবেশন করবে শিল্পীরা।
মাঝিপাড়া এলাকার রতন সরেন জানান, এ রকম পরিবেশে নিজের বাড়ি হবে এটা কখনই ভাবিনি। চায়ের বাগানে পাশে ঝুপড়ি ঘর তুলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে বসবাস করতাম। এখন নতুন বাড়ি পাওয়ার আনন্দে বুক ভরে গেছে। আমরা পেলাম নতুন স্থায়ী ঠিকানা। সৃষ্টিকর্তা যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুগ যুগ ধরে সুস্থতার সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শতভাগ গৃহায়ণ প্রকল্পে এই প্রথম আদিবাসীদের জন্য শতভাগ আশ্রয়ণ সম্পন্ন হলো। এই পল্লি গড়ে উঠলে আদিবাসীদের শতভাগ গৃহায়ণ ও সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের বিকাশে যোগ হবে নতুনমাত্রা।