বাংলাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে।
সকালে সংবাদ সম্মেলন করে ‘যাত্রীবান্ধব ভাড়া’ পুনঃনির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী একে ‘মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য নির্ধারিত’ বলে অভিযোগ করে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকদের ডাকা ধর্মঘট শেষ হয়েছে গণ-পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। সোমবার থেকে নতুন ভাড়ায় পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে।
সিএনজি না ডিজেলচালিত বোঝার উপায় নেই
ঢাকার ব্যস্ততম দুইটি সড়ক মহাখালী এবং ফার্মগেট এলাকায় গিয়ে বিবিসি সংবাদদাতা কাদির কল্লোল দেখতে পেয়েছেন, ঢাকা সিটির সবগুলো রুটেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
মিরপুর-গুলিস্তানে ভাড়া যেখানে আগে ছিল ২৫টাকা, সেটি এখন ৩৫ টাকা নেয়া হচ্ছে।
ভাড়া বাড়ানোয় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যাত্রীরা বলছেন, তাদের আয় বাড়েনি, কিন্তু ভাড়া বেড়েছে, অন্যান্য খরচ বেড়েছে। এটি তাদের ওপর একটি বিশাল চাপ তৈরি করেছে।
যাত্রীদের অনেকে বিবিসির কাছে অভিযোগ করেছেন, এখন সব বাসই নিজেদের ডিজেল চালিত দাবি করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে।
সরকার বলেছে, সিএনজিচালিত পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হবে না।
এখন যাত্রীরা বলছেন, কোন বাস ডিজেলচালিত না সিএনজিচালিত সেটি বাইরে থেকে দেখে প্রমাণ সম্ভব হয় না।
ফলে সরকারের উচিত এটি নিশ্চিত করে বাসে মার্ক করে দেয়া বা স্পষ্ট উল্লেখ করে দেয়া।
অন্যদিকে বর্ধিত ভাড়ার কোন চার্টও এখনো বাসে বা টার্মিনালে দেয়া হয়নি, এটিও যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
‘কি-ই-বা করার আছে?’
গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সোমবার জারি করা হলেও, রোববার রাতে ধর্মঘট উঠে যাওয়ার পর থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর করে পরিবহন মালিকেরা।
রোববার সকাল থেকে অফিসগামী এবং অন্যান্য কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাইরে বেরিয়ে নতুন বর্ধিত ভাড়ার মুখে পড়েন যাত্রীরা।
যাত্রীদের মধ্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে তার একটি নমুনা দেখা যায় বিবিসি বাংলারে ফেসবুক পাতায় ‘বাসের ভাড়া নিয়ে আপনার কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে’ শিরোনামে একটি পোষ্ট দেবার পর। দুই ঘণ্টায় সেখানে প্রায় পৌনে তিন হাজার মানুষ মন্তব্য করেছেন।
এসব মন্তব্যে সবাইই নতুন বর্ধিত ভাড়া নিয়ে হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কেউ আবার ব্যঙ্গ করে রাস্তায় নিজেদের অভিজ্ঞতা লিখেছেন ওই পোষ্টে।
ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ জ্বালানি তেলের দাম বাড়া এবং পরিবহন ভাড়ার পর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন।
বিবিসির ওই পোষ্টে এমডি নাসির নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তৈল এর দামও বাড়ালেন ভাড়াও বাড়ালেন, সেই সাথে নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় জিনিস এর দামও বাড়িয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। …মতামত আর কি দিতাম, আপনারা জোর করে যা চাপাবেন আমরা তাই মেনে নেবো। এ ছাড়া আমাদের কি-ই-বা করার আছে!”
রাখসাং এস সাংমা নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মিটিং-এ বাস ও শ্রমিক মালিকদের ডাকা হয়েছে। যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধি কাউকে ডাকা হয়েছে বলে মনে হয় না।”
এমডি মামুন মৃধা নামে আরেকজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন, “যে দায় সরকার নিতে পারেনা, কোন মালিক পক্ষ নিতে পারে না, তা জনগণের উপর কেন হস্তান্তর করা হয়?”
পরিবহন মালিকদের সাথে সরকারি সংস্থার বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে সাথি সানা নামে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “এদের মুল উদ্দেশ্য কখনো তেলের দাম কমানো ছিল না, ছিল ভাড়া বাড়ানো। সেটা সফল হয়েছে।”
এদিকে, রোববার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র সঙ্গে পরিবহন মালিকদের যে বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে বর্ধিত ভাড়া কেবলমাত্র ডিজেলচালিত পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
সিএনজিচালিত পরিবহনের ভাড়া বাড়বে না বলে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু বিবিসির পোষ্টে অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পর যেসব বাস-মিনিবাস সিএনজিতে চলে তারাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।